চীনে চিকিৎসা নিতে গেলো বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম দল

ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশীদের চিকিৎসার জন্য ভারত যাওয়ার প্রবণতা ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। দেশটিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশীদের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে ছিলো বাংলাদেশীরা।
ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশটিতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বাংলাদেশীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে চিকিৎসা পর্যটনে আসা মোট বিদেশীর মধ্যে বাংলাদেশীর হার দাঁড়ায় ৭০ শতাংশের কাছাকাছিতে।
৫ আগষ্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের চিকিৎসাসেবা দিতে এ প্রথম উদ্যোগ নিয়েছে চীনা সরকার। চীনে চিকিৎসাসেবা নিতে বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম দল গতকাল সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকা ছেড়েছে।
রোগীদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এসময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকার চীনা দূতাবাস। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের রোগীদের প্রথম ব্যাচকে চীনে পাঠাতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা জানি বাংলাদেশের রোগীরা চিকিৎসার জন্য নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। সে কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। এ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশিরা চীনে খুব সহজেই উন্নতমানের চিকিৎসা নিতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চীনের ইউনান প্রদেশের তিনটি শীর্ষ পর্যায়ের হাসপাতালকে বিশেষভাবে বাংলাদেশি রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। সেখানেই রোগীরা চিকিৎসা নেবেন। রোগীরা যেন সহজে ভিসা পান, সে উদ্যোগও নিয়েছে চীন সরকার।
চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মেডিকেল চেকআপ ও চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম ব্যাচ আজকে চীন যাচ্ছে। এখানে মোট ৩১ সদস্য রয়েছেন। যেখানে ১৪ জন রোগী, ৬ জন পরিবারের সদস্য, ৫ জন চিকিৎসক, ৫ এইচইউসি প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক আছেন।
ইয়াং ওয়েন বলেন, চীন রোগীদের সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী একাধিক স্কিম রেখেছে। এরইমধ্যে ভিসা প্রসেস সহজ করা হয়েছে এবং চাইনিজ এয়ারলাইন্স রোগীদের সুবিধার্থে স্বল্পমূল্যে প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করছে। তিনি বলেন, চীন সরকার বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী চারটি হাসপাতাল ডেডিকেট করেছে। সবগুলো হাসপাতালে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রোগীদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী হায়দার আলী, আইনজীবী রাকিনুল হাকিমসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরতরা।
হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমি অনেক জায়গায় চিকিৎসা করেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। পশ্চিমা দেশেও চিকিৎসা করেছি। তবে শুনেছি, চীনে ভালো চিকিৎসা দেয়া হয়, সেখানে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছি। আশা করি, ভালো চিকিৎসা পাবো।
আইনজীবী রাকিনুল হাকিম বলেন, প্রথমবারের মতো চিকিৎসা নিতে চীনে যাচ্ছি। এর আগে আমরা চিকিৎসা নিতে থাইল্যান্ড যেতাম। আশা করি, চীনে উন্নত চিকিৎসা পাবো এবং সুস্থ হয়ে ফিরবো। বাংলাদেশের আরও রোগী যাবেন এবং সুবিধা পাবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে বাংলাদেশীদের মধ্যে সবসময়ই দেখা গেছে আস্থার সংকট। বিশেষ করে জটিল রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য বিগত বছরগুলোতে ভারতে গিয়েছেন প্রচুর বাংলাদেশী। এছাড়া বাংলাদেশকে এমভিটি খাতের পর্যটকদের বড় উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে এ নিয়ে বিশেষ কার্যক্রমও চালিয়েছে দেশটির বেসরকারি হাসপাতালগুলো।
তবে এ চিত্রে আমূল পরিবর্তন দেখা দিয়েছে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের পতনের পর। কূটনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে বাংলাদেশীদের ভিসা কার্যক্রম অত্যন্ত সীমিত হয়ে আসে। চিকিৎসা ভিসা চালু করা হলেও তা পাচ্ছে খুব কম সংখ্যক আবেদনকারী। এ অবস্থায় ভারতের পরিবর্তে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোকে বেছে নিচ্ছেন বাংলাদেশীরা। চীনে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ এতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। একই সাথে ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্যও কমবে। যেটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল।
সবার দেশ/এনএন