Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ১৪ মার্চ ২০২৫

গণমাধ্যমে হাসিনার ভূত, বর্ণা তার স্যাম্পল

২৪- এর বিপ্লবীরা বহুদাবিভক্ত, ফ্যাসিস্ট আ’লীগ একতাবদ্ধ

চব্বিশের অভূত্থানকে মিডিয়া ভুলিয়ে দিচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। নয়া ফ্যাসিজম যারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারাও বিপ্লবের কেনো ফলোআপ অনুষ্ঠান করছে না। এতে করে মানুষ ভুলতে বসেছে চব্বিশে একটি বিপ্লব বাংলাদেশে হয়েছিলো। কয়েক বছর পরই দেখা যাবে এর ফলাফল।

২৪- এর বিপ্লবীরা বহুদাবিভক্ত, ফ্যাসিস্ট আ’লীগ একতাবদ্ধ
ছবি: সংগৃহীত

ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যা চালিয়ে ভারতে পালানোর ঘটনা ৭ মাস পেরিয়েছে। টানা ১৬ বছরের শাসনামলে তাকে ফ্যাসিস্ট ও হিংস্র হয়ে ওঠার পেছনে গুরুতরভাবে ভূমিকা রেখেছিলো কিছু গণমাধ্যম ও দোসর সাংবাদিকরা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতন হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এখনো ঘাপটি মেরে আছে সেসব দোসররা। রয়েছে সুযোগের অপেক্ষায়।

এখন টিভির নিউজরুম এডিটর ও টেলিভিশন উপস্থাপিকা জেনিসিয়া বর্ণার আচমকা ফাঁস হওয়া গা‌লি‌কাণ্ডে যেন সে চিত্রই উন্মোচিত হয়েছে, বলছেন নেটিজেনরা।

জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষনেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলোনের প্রধানমুখ হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলমকে লাইভ অনুষ্ঠানে ‘শুয়োর’ বলে চাকরী হারিয়েছেন বর্ণা।

সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ঘটনা, আট বছরের শিশু আছিয়া নিজ বোনের শশুরবাড়িতে গণধর্ষনের স্বীকার হয়ে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যায়। ঘটনার প্রেক্ষাপটে একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল ‘এখন টিভি’ সংবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে সরাসরি সম্প্রচারে ছিলো।

অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারে থাকা অবস্থায়, কারিগরি ত্রুটির ফলে, স্টুডিও ইসনাইড কনভার্সেশনের একটি অংশ সরাসরি সম্প্রচারে চলে আসে। যেখানে নিউজরুম থেকে একজন জিজ্ঞেস করছিলেন, হাসনাত এবং সারজিস মাগুরায় গিয়েছেন কি না। তার প্রতিউত্তরে এখন টিভির উপস্থাপিকা বর্ণা আনকোট অবস্থায় বলেন, ‘এই শুয়োর গুলো গেলেই কি আর না গেলেই কি’।

মুহুর্তের মধ্যে টিভি ফুটেজটি ভাইরাল হয়। সমালোচনার ঝড় শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিতর্কের মুখে এখন টিভির সিইও তুষার আব্দুল্লাহ তড়িঘড়ি করে টিভি উপস্থাপিকা জেনিসিয়া বর্ণাকে চাকরিচ্যুত করেন।

নেটিজেনরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর সাংবা‌দিক‌রা অভ‌্যুত্থা‌নের নায়ক ছাত্রনেতা‌দের কতটা ঘৃণা ক‌রে তা প্রমাণ হ‌য়ে‌ছে আচমকা ফাঁস হওয়া এ গা‌লি‌তে। ছাত্রদের তা‌রাই ঘৃণা ক‌রে, যারা জুলাই গণহত‌্যার সমর্থক। একজন সাংবা‌দিকের অভ‌্যুত্থান ও অভ‌্যুত্থানকারী‌দের এতটা বি‌দ্বেষ থাকলে নির‌পেক্ষ হ‌বেন কী ক‌রে? যা গা‌লিকা‌ন্ডের আসল আলাপ। সাংবা‌দিকতা রাজ‌নৈ‌তিক কর্মীর জন‌্য নয়।

এদিকে, সে সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজেই। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত ২টা ২০ মিনিটে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, এখন টিভির সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। আপনার এ গালির স্বাধীনতার জন্যই আন্দোলন করেছিলাম। শুধু মত প্রকাশ নয়, দ্বিমত প্রকাশও অব্যাহত থাকুক।

ফেসবুক ব্যবহারকারী ইসরাফিল ফরাজী লিখেছেন, গতকাল রাতে ওই গণমাধ্যম যা করেছে সেটা তার অফিস পলিসি। হাসনাতেরও নিজস্ব একটি মতাদর্শ রয়েছে। আমিও মনে করি ওদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়া উচিত। মিডিয়ার ৯৫% ওদেরই লোক। একটা ভয়েস শুধু ভুলে প্রকাশ হয়েছে বলে বুঝা গেছে। এমন কত হাজার গালি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন হাউজ দেয় তার কী হবে?

চব্বিশের অভূত্থানকে মিডিয়া ভুলিয়ে দিচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এটা শুধু পুরনোরা নয় নয়া ফ্যাসিজম যারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারাও বিপ্লবের কেনো ফলোআপ অনুষ্ঠান করছে না। এতে করে মানুষ ভুলতে বসেছে চব্বিশে একটি বিপ্লব বাংলাদেশে হয়েছিল। কয়েক বছর পরই দেখা যাবে এর ফলাফল।

মোস্তফা সারিয়ার রাজিব লিখেছেন, যেসব সাংবাদিক কট্টর আওয়ামীলীগ ও সুবিধাভোগী এরা তো ছাত্রদের ঘৃণা করবে! ফ্যাসিস্টদের সমর্থক এসব সাংবাদিকদের প্রতি করুনা দেখানো যাবে না! হাসিনার আমলে তো গুম হয়ে যেতো। সাংবাদিকদের অনেকেই আমাদের বাচ্চাদের খুন করার সমর্থন দিয়েছে। তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এরা এখনও সক্রিয়। যারা আবারও সুযোগ পেলে আমাদের সন্তানদের খুন করার ন্যারেটিভ তৈরী করবে।

সাংবাদিক গাজী আনোয়ার লিখেছেন, দ্বিমত প্রকাশের ভাষাও শালীন এবং সাবলীল হওয়া উচিত। সাংবাদিকতায় প্রফেশনালিজম এর বাহিরে গেলে চাকরিচ্যুত হবে স্বাভাবিক। সাংবাদিক হিসেবে পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতার মানদণ্ড লঙ্ঘণ করা যায় না। সাংবাদিকতা কোনো লেবাস না, কিন্তু অনেকে লেবাস নিয়েছেন সাংবাদিকতার। এগুলো আসলে নিচু জাতের এক্টভিস্ট!

সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যাচ্ছে, দোসর সাংবাদিকরা কিভাবে সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আরো হিংস্র হয়ে উঠতে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। তারা হাসিনার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নগ্ন সমর্থন, দমনপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা ও নির্লজ্জ চাটুকারিতার মাধ্যমে রক্তপিপাসু হাসিনাকে আরও ভয়ঙ্কর, নিপীড়ক ও গণহত্যাকারী হয়ে ওঠতে উৎসাহ জুগিয়েছেন বলে মনে করেন সচেতন মহল।

জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি গত বছরের ২৪ জুলাইয়ের। ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময়ের নামে তার চাটুকারিতা করেন বাছাইকৃত দোসর সাংবাদিকরা। হাজার হাজার হতাহত ছাত্রজনতার জন্য তাদের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখাতে তো যায়নি উল্টো বিটিভি ভবন ও মেট্রোরেলের জন্য মায়া কান্না এবং প্রশাসনরে ক্র্যাকডাউনের প্রশংসা করে নরপিশাচ হাসিনাকে রক্তাক্ত দমনপীড়নে আরও উৎসাহ দেন। ফ্যাসিবাদের দোসর এসব সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা।

সবার দেশ/কেএম