Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:২০, ২০ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ০০:২২, ২০ মার্চ ২০২৫

চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

চীন কেনো লাল গালিচা নিয়ে ড. ইউনূসের অপেক্ষায়?

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেয়ারব্যাঙ্ক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের অনাবাসিক সহযোগী আনু আনোয়ার বলেন, ইউনূস চীনকে আশ্বস্ত করতে চাইবেন যে বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।

চীন কেনো লাল গালিচা নিয়ে ড. ইউনূসের অপেক্ষায়?
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তাহে চীন সফরে যাচ্ছেন। এ সফরে চীনের পক্ষ থেকে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ড. ইউনূস গত বছরের আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা জানিয়েছে, ২৭ মার্চ হাইনানে বোয়াও ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস। পরদিন তিনি বেইজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং খ্যাতনামা পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেবেন, যেখানে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

ড. ইউনূসের এ সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। সরকার পতনের পর নয়াদিল্লি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের আশ্রয় দিয়েছে।

এদিকে, ভারত সম্প্রতি ৪১০০ কিলোমিটার সীমান্তের তিন দিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ শুরু করেছে, যা ঢাকা কূটনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ করেছে।

ভারতের সুরে সুর মিলিয়ে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। তবে ড. ইউনূসের কার্যালয় এ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে এটি নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ ছাড়াই করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনের সমর্থন পেলে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক বৈধতা বৃদ্ধি পাবে। কারণ, তিনি ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে বড় শক্তির স্বীকৃতি চাইছেন।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আনু আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশ সরকার বেইজিংকে বোঝানোর চেষ্টা করবে যে তারা একটি নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক অংশীদার।

চীন সতর্ক কৌশলে এগোতে পারে, তবে বৈঠকে বিনিয়োগের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।

২০০৬ সালে চীন ভারতকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হয়ে ওঠে। গত বছর দুই দেশের মধ্যে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে, যার মধ্যে ২২.৮৮ বিলিয়ন ডলার চীনা রফতানি।

বাংলাদেশ ২০১৬ সালে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (BRI) যোগ দেয়। বর্তমানে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগ রয়েছে।

ঢাকা বর্তমানে মংলা বন্দরের সম্প্রসারণে চীনের কাছ থেকে ঋণ চাইছে। তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চীন ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বকেয়া ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেয়ারব্যাঙ্ক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের অনাবাসিক সহযোগী আনু আনোয়ার বলেন, ইউনূস চীনকে আশ্বস্ত করতে চাইবেন যে বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউনূসের সফরে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনায় চীনের সহায়তা চেয়েছিলো, যা ভারতের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে চীন ভারতকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও, ভারত নিজেই প্রকল্পটি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, যদি এ সফরে তিস্তা নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের কৌশলগত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় বড় অর্জন হবে।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বেইজিং ঢাকার সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী করছে।

  • অক্টোবরে বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
  • সাম্প্রতিক সময়ে ইউনূস ও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনা কূটনীতিকরা।
  • ভারত বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসার সুযোগ কমানোয় ঢাকা এখন চীনে চিকিৎসার বিকল্প খুঁজছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনূসের চীন সফর বাংলাদেশ-ভারত-চীন ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

এ সফরে যদি চীনা বিনিয়োগ ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর হয়, তবে তা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য হতে পারে।

সবার দেশ/কেএম