Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৯, ২৬ মার্চ ২০২৫

‘চেতনা’ ব্যবসামুক্ত ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস আজ

৫৫তম স্বাধীনতা দিবসটি সবার জন্য মাইলফলক হতে যাচ্ছে, কারণ এবারের দিবস উদ্যাপন হবে এক নতুন পরিবেশে, যেখানে সবাইকে একত্রিত করা হয়েছে। স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের পথে অনেক বাধা এলেও, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।

‘চেতনা’ ব্যবসামুক্ত ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস আজ
ফাইল ছবি

আজ ২৬ মার্চ, ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনেই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে, যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি পেয়েছিল একটি মুক্ত দেশ। তবে স্বাধীনতার পরবর্তী প্রায় দুই দশক দেশটি কার্যত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত ছিলো, যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকার এবং জাতীয় ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। ৫ আগষ্ট পট পরিবর্তনের পর মুক্ত পরিবেশে সবাই সত্যিকারের স্বাধীনতা দিবস পালন করবে আজ।

বিগত বছরগুলো ছিলো মুজিব বন্দনা, ভারতীয় উপাসনা এবং দিল্লির প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবস পালন করার সময়। মুক্তিযুদ্ধের বহু নেতার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জায়গা ছিলো না, আর ভারতের অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো এবং শেখ মুজিবকে উঁচু আসনে বসানোর মতো রেওয়াজে পরিণত হয়েছিলো। স্বাধীনতার ঘোষক মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক বাতিল করেছিলো ফ্যাসিস্ট ‘চেতনা’ বেচার সরকার। তবে গত ৫ আগস্ট, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর দেশ পুনরায় প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এবারের স্বাধীনতা দিবস সে স্বাধীনতার বাস্তবিক উদযাপন।

আজকের দিনটির গৌরবময় ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর পর, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। এমন এক পরিস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীকে কোন প্রকার নির্দেশনা না দিয়ে স্বেচ্ছায় পাকিস্তানী বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করে রাওয়ালপিন্ডি যান। তার অনুপস্থিতিতে তার দল আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতে পালিয়ে যান। কিন্তু ২৬ মার্চ, প্রথম প্রহরে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিশাহীন দেশের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে ঐক্যবদ্ধ করেন। যার মাধ্যমে দেশ স্বাধীনতার দিকে প্রথম পদক্ষেপ নেয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়।

স্বাধীনতা অর্জনের পঁইত্রিশ বছর পর, প্রশ্ন উঠেছে- বাংলাদেশ কি তার প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছে? জাতির স্বপ্ন এবং বাস্তবতার মধ্যে বিশাল ব্যবধান এখনও বিদ্যমান। অথচ এবার, দীর্ঘ ১৮ বছর পর, বাংলাদেশ সরকার মুক্তভাবে স্বাধীনতা দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে সকল মত-পথের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নামক ব্যবসা ফেঁদে বিভক্তির রাজণতি চালু করে ১৮ বছর এদেশের জনগণের ওপর যে জুলুম অত্যাচার চালানো হয়েছে, তা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অত্যাচারকেও হার মানায়।

স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব কী, সে বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেন, কোন রাষ্ট্রের ক্ষমতা যখন তার অভ্যন্তরীণ সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং অন্য কোন বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়াই চলতে পারে, তখন তাকে সার্বভৌমত্ব বলে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৫ বছরে এর সার্বভৌমত্ব কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

পঁচিশ বছরের মুজিব-ইন্দিরা গোলামির চুক্তি এবং ভারতের প্রতি আনুগত্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কতটা বজায় ছিলো, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ভারতীয় দাসত্বের অন্ধকার যুগেও শেখ মুজিবের শাসন ছিলো সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রতীক। এরপর, ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করেন, তবে ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন বা গণতন্ত্রের বাস্তবায়ন হয়নি। জনগণের অধিকার পরিপন্থী কার্যক্রমই চালিত হয়েছিলো।

এবার, ৫৫তম স্বাধীনতা দিবসটি সবার জন্য মাইলফলক হতে যাচ্ছে, কারণ এবারের দিবস উদ্যাপন হবে এক নতুন পরিবেশে, যেখানে সবাইকে একত্রিত করা হয়েছে। স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের পথে অনেক বাধা এলেও, ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।

স্বাধীন বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য ছিলো- গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় এবং মানবিক মর্যাদা। যদিও কিছু জায়গায় সফলতা এসেছে, তবে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে এখনও বিস্তর ফারাক রয়েছে। বর্তমানে, স্বাধীনতার ৫৫ বছর পর বাংলাদেশের গণতন্ত্র কি সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা নিয়ে চলমান বিতর্ক অব্যাহত আছে।

মুক্তিযুদ্ধের ‘চেতনা’ এবং দেশপ্রেমের মধ্যে বিভক্তি আজ কিছুটা হলেও কমেছে। এবারের স্বাধীনতা দিবসে জাতির ঐক্য এবং এক নতুন আশার আলো দেখছে বাংলাদেশের মানুষ।

সবার দেশ/এমকেজে