বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (BFA) সম্মেলনে ড. ইউনূস
এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত
এশিয়া বর্তমানে সবচেয়ে কম সংহত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে, মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। তার মতে, এশিয়ার দেশগুলোকে অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে, যাতে অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

এশিয়ার দেশগুলোর ভবিষ্যৎ একে অপরের সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এ পরিবর্তিত বিশ্বে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অপরিহার্য। একটি যৌথ ভবিষ্যত ও সমৃদ্ধির জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা দরকার। তিনি এসব কথা চীনের হাইনানে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (BFA) সম্মেলনে বলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। প্রথমত, একটি টেকসই অর্থায়নব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক (MDB) ও অনুরূপ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা চালানোর প্রস্তাব দেন, যেগুলো এশিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া, ভবিষ্যতে আসন্ন ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নির্ভরযোগ্য তহবিলের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
এশিয়া বর্তমানে সবচেয়ে কম সংহত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে, মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। তার মতে, এশিয়ার দেশগুলোকে অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে, যাতে অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
ড. ইউনূস কৃষির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে তাদের সম্পদ ও কৃষিকাজের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে আমদানিনির্ভরতা কমানো যায় এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া, প্রযুক্তিভিত্তিক টেকসই কৃষি এবং জলবায়ুবান্ধব কৃষির উদ্ভাবনকে আরও সম্প্রসারণের ওপরও গুরুত্ব দেন।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন যে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পুনরুদ্ধারমূলক, বিতরণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি শক্তিশালী প্রযুক্তিগত বাস্তুতন্ত্র গড়তে হবে। এটি শুধুমাত্র প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ড. ইউনূস এ চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলা করতে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দৃঢ় সহযোগিতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উন্নয়নে এশিয়া একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে পারে, যেখানে টেকসই অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন একে অপরের সাথে মিশে গিয়ে এ অঞ্চলের সকল দেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।
এশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন একটি ইতিবাচক ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রদানকারী বক্তব্য বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। ড. ইউনূসের মতে, সহযোগিতা ও সংহতির মাধ্যমে একত্রে কাজ করা গেলে, এ অঞ্চলের দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
সবার দেশ/কেএম