সম্পর্কোন্নয়নে সম্মত ঢাকা-বেইজিং
চীনে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাবে বাংলাদেশি পণ্য
চীনা সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি স্কলারশিপ প্রদান করবে। বর্তমানে হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, যা দুই দেশের শিক্ষাগত সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটাবে।

বাংলাদেশের এলডিসি (লিস্ট অফ লেস ডেভেলপড কান্ট্রিজ) গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের শুল্ক ও কোটামুক্ত রফতানি সুবিধা আরও দুই বছর ধরে বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং। তিনি চীন সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক সভায় এ ঘোষণা দেন। এর ফলে, বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনের বাজারে বজায় থাকবে।
চীনের এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য বড় একটি সুবিধা, বিশেষ করে এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর চীনের বাজারে রফতানি সুবিধা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে এবং এ পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র তিন বছরের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে প্রস্তুত, তবে কানাডা এখনও আইনগত পরিবর্তন আনতে পারেনি। অন্যদিকে, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
চীন ২০২২ সালে বাংলাদেশকে তার বাজারে ৯৯% পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছিলো, তবে বাংলাদেশের রফতানি এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীনে বাংলাদেশের রফতানি ছিলো ৬৭৭ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের ৬৮৩ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় কম। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক ও র্যাপিড এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম এ রাজ্জাক টিবিএসকে মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের সক্ষমতার অভাবের কারণে এ সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন <<>> এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত
চীন বিশ্বের বৃহত্তম ট্রেডিং ইকোনমি হিসেবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, চীনা পণ্যশুল্ক বৃদ্ধি এবং চীনা কোম্পানিগুলোর স্থানান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশের বিনিয়োগ খাতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সফরের মাধ্যমে চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার কথা উল্লেখ করেছেন। চীনা বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে, বিশেষ করে চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকায় চাইনিজ ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
এদিকে, চীনে বাংলাদেশ থেকে আম রফতানি শুরু হচ্ছে আগামী গ্রীষ্মকাল থেকে। চীন কাঁঠাল, পেয়ারা এবং অন্যান্য জলজ পণ্য আমদানি করতেও আগ্রহী, যা দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের বিশাল ব্যবধান কমাতে সহায়ক হতে পারে।
চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে চীনের অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সংলাপের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।
এছাড়া, চীনা সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি স্কলারশিপ প্রদান করবে। বর্তমানে হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, যা দুই দেশের শিক্ষাগত সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটাবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের আরও উন্নতি এবং সহযোগিতার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য একসঙ্গে কাজ করার সংকল্প ঘোষণা করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
এভাবে, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর এবং বিস্তৃত হতে চলেছে, যা ভবিষ্যতে উভয় দেশের জন্য অনেক সুবিধা বয়ে আনতে পারে।
সবার দেশ/কেএম