২.১ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সুবিধার প্রতিশ্রুতি চীনের

চীন সরকার এবং দেশটির বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ এবং অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি চীন সফর করছেন, যেখানে চীন থেকে এসব প্রতিশ্রুতি এসেছে।
বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, এটি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের নতুন এক দ্বার উন্মোচন করতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানালে, প্রায় ৩০টি চীনা কোম্পানি চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এসব কোম্পানি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে উৎপাদন, শিল্প এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বিনিয়োগ করবে।
এছাড়াও, চীন বাংলাদেশে মংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং কারিগরি সহায়তা হিসেবে আরো ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। বাকি অর্থ অনুদান এবং অন্যান্য ঋণ হিসেবে আসবে।
বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এ সফরের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, এটি বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এ বিনিয়োগ বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, চীন সরকারের বিনিয়োগ এবং ঋণের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি মাইলফলক হতে পারে। বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে চীনা বিনিয়োগ কার্যক্রম বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতিশ্রুতি
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময়, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশে চীনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের জন্য সবুজ সংকেত দেয়ার অনুরোধ করেছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এছাড়া, চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, এ সফর বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
চীনা কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক
শুক্রবার, ড. ইউনূস এবং আশিক চৌধুরী বেইজিংয়ে বিশ্বের বৃহত্তম কিছু কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনটি ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনে বৈঠক করেন। সেখানে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য চীনা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, বিশেষত উন্নত বস্ত্রশিল্প, ওষুধশিল্প, হালকা প্রকৌশল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে।
এতে চীনা কোম্পানির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উপর গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং কয়েকটি কোম্পানি আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করার সম্ভাবনা বিবেচনা করছে।
চীনের সাথে সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনা
বাংলাদেশের সরকার এবং ব্যবসায়িক মহল এ বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রস্তাবনাকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। বিশেষত, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বাংলাদেশের জন্য চীনের সঙ্গে এ ধরনের সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বেশি লাভজনক হতে পারে।
এটি কেবল বাংলাদেশের শিল্প খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে না, বরং চীনের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করবে। আশা করা হচ্ছে, এ সম্পর্কের মাধমে বাংলাদেশের জন্য চীনের বাজারেও নতুন দৃষ্টিকোণ উন্মোচিত হবে।
এ সফরকে কেন্দ্র করে চীনের বিভিন্ন প্রভাবশালী কোম্পানির বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আরও দৃঢ় হবে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।
সবার দেশ/কেএম