আল জাজিরার রিপোর্ট
পাচারকৃত ২৫ বিলিয়ন ডলার ফেরানোর মিশনে গভর্ণর

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নাটকীয় পরিবর্তনের পর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন ড. আহসান এইচ মনসুর। তার বর্তমান লক্ষ্য হলো, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অভিজাতদের বিদেশে পাচার করা বিপুল অর্থ উদ্ধার করা।
তিনি বিশেষভাবে বিদেশে পাচার হওয়া ২৫ বিলিয়ন ডলার ফেরানোর বিষয়ে কাজ করছেন, যা ইতোমধ্যেই অনেক দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উদ্যোগ
আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আহসান মনসুর বর্তমানে ১১টি প্রভাবশালী পরিবারকে লক্ষ্য করে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, এবং সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত। বিশেষজ্ঞ দল গঠন করে তাদের সম্পদের সন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিযোগটি হলো, এক পরিবারের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ আমানতই তুলে নেয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকটি প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থা পৌঁছেছে।
অর্থ ফেরত আনার জন্য আহসান মনসুরের উদ্বেগ
আহসান মনসুরের মতে, পাচারকৃত অর্থ দ্রুত উদ্ধার করা না গেলে সে অর্থ অনেকটাই অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অর্থের পরিমাণ আরও কমে যেতে পারে। তার প্রধান লক্ষ্য হলো, বিশ্বব্যাপী চুরি হওয়া সম্পদের মূল গন্তব্য হিসেবে ইংল্যান্ডকে চিহ্নিত করে, যেহেতু সেখানে প্রচুর পাচারকৃত সম্পদ রয়েছে, বিশেষ করে লন্ডনে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে লন্ডন এবং দুবাইয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি রয়েছে। তাদের ৩৬০টিরও বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট লন্ডনে রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যে সাইফুজ্জামানের ৪০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিদেশি সম্পদ জব্দ করার চেষ্টা করছে।
আইনজীবী, ব্যাংকার এবং এস্টেট এজেন্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত
আহসান মনসুর আরও জানিয়েছেন, পাচারকৃত অর্থে সহায়তা করা আইনজীবী, ব্যাংকার এবং এস্টেট এজেন্টদের বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এমন এজেন্ট বা ব্যাংক অপারেটর যারা আইন লঙ্ঘন করে অপরাধীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া
আহসান মনসুর জানিয়েছেন, পাচারকৃত অর্থের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে, এ পর্যন্ত প্রক্রিয়া কিছুটা ধীরগতিতে চলছে কারণ এটি একটি জটিল কার্যক্রম। যদিও বৃটেন সরকার সহায়তা করছে, তিনি বলেছেন, অপরাধীদের চক্রের মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তাদের সহযোগী আইনজীবীদের সঙ্গে দর-কষাকষি করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তন এবং জটিলতা
আহসান মনসুর আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের পর পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার কার্যক্রম আরও জটিল হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল স্থগিত করে দেয়ার ফলে, বাংলাদেশে যে তদন্তকারী সংস্থা কাজ শুরু করার কথা ছিলো তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়ার জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
আহসান মনসুর এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এখন একটি বড় দায়িত্বের মুখোমুখি, যেখানে দেশের বাইরে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করার প্রচেষ্টা চলছে। তবে, অর্থ উদ্ধার কার্যক্রম কিছুটা জটিল এবং ধীরগতিতে এগোচ্ছে, এর জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সহযোগিতার প্রয়োজন।
সবার দেশ/কেএম