বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন দিগন্তে প্রবেশ: ড. ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, চীনকে ভালো বন্ধু হিসেবে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের চীনের সাথে সম্পর্ক দীর্ঘকাল ধরে শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ ছিলো। চীনের সাথে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক এবং দুই দেশের মধ্যে একে অপরকে সাহায্য করার সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের জনগণ চীনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখতে চায়, বিশেষত চীনের দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্য এবং জনগণের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে দেশটির মডেল থেকে। তিনি বলেন, চীন যে ভাবে নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর উন্নতির দিকে মনোযোগ দিয়েছে, তা বিশ্বে অন্যতম সফল উদাহরণ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে। চীন বাংলাদেশকে তার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে রক্ষা করেছে, এবং বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১,০০০ চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যা ৫,৫০,০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে নিজ দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চায়।
ভবিষ্যতে চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও আসার সম্ভাবনা রয়েছে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ইউনূস বলেন, চীনের সহযোগিতায় দুই দেশ নতুন একটি অর্থনৈতিক পরিপূরকতা তৈরি করবে এবং বৃহত্তর বাজার সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও উন্নত করতে চীনের সহযোগিতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশি রোগী, ডাক্তার এবং ট্রাভেল এজেন্সির প্রথম দলটি চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ে চিকিৎসা পরীক্ষা ও চিকিৎসা পর্যটন বাজারের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে গিয়েছিলো। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে শিখে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জনগণের সাথে চীনের জনগণের আদান-প্রদান বহু বছর ধরে চলে আসছে, বিশেষত সন্ন্যাসী জুয়ানজ্যাং এবং পণ্ডিত অতিশ দীপঙ্করের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং চীনের সম্পর্কের ভিত্তি এক অনবদ্য বন্ধুত্বপূর্ণ ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত, যা ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় হবে।
এ বছর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। ড. ইউনূস বলেন, এটি শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয় নয়, এটি সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী ৫০ বছর চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আশা করেন, বাংলাদেশ এবং চীনের ভবিষ্যত সম্পর্ক হবে আরও গভীর এবং বিস্তৃত, যেখানে শুধু অর্থনীতি নয়, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
সবার দেশ/কেএম