প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে পাঠালো ত্রাণ সামগ্রী
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ালো বাংলাদেশ

মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর যৌথ তত্ত্বাবধানে আরও ওষুধ, তাবু, শুকনো খাবার, চিকিৎসা সেবা এবং উদ্ধার ও মেডিকেল টিম পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
রোববার (৩০ মার্চ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রাথমিকভাবে আজ দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি কুর্মিটোলা থেকে ১টি সি-১৩০জে বিমান এবং আর্মি এভিয়েশনের ১টি কাসা সি-২৯৫ডব্লিউ বিমান ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে:
- শুকনো খাবার (চাল, ডাল, বিস্কুট, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট)
- মেডিকেল কিট ও জরুরি ওষুধ
- তাঁবু ও গরম কাপড়
- উদ্ধার ও পুনর্বাসন সামগ্রী
উদ্ধার কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকারের প্রয়োজন সাপেক্ষে পরবর্তীতে আরও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে:
- সেনাবাহিনীর ২০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল
- ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১০ সদস্যের উদ্ধারকারী দল
- বিমান বাহিনীর মেডিকেল টিম
ভূমিকম্পের ভয়াবহতা
গত ২৮ মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের (USGS) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের শান রাজ্যে। শক্তিশালী এ ভূমিকম্পের ফলে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম বিধ্বস্ত হয়েছে, ভবন ধসে গেছে এবং রাস্তাঘাট বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
নিহত ও আহত সংখ্যা:
- মিয়ানমারে কমপক্ষে ১৬০০ জন নিহত
- আহতের সংখ্যা ৩,০০০ জনের বেশি
- হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ
ভূমিকম্পের ফলে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং পানির সংকট দেখা দিয়েছে
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহযোগিতা
এই ভয়াবহ দুর্যোগে মিয়ানমারকে সহায়তার জন্য বেশ কয়েকটি দেশ এগিয়ে এসেছে।
- চীন ও ভারত: ত্রাণ ও উদ্ধার সহায়তা পাঠিয়েছে
- জাতিসংঘ (UN): জরুরি মানবিক সহায়তা ঘোষণা করেছে
- আন্তর্জাতিক রেড ক্রস: উদ্ধার অভিযানে কাজ শুরু করেছে
বাংলাদেশের আগের অভিজ্ঞতা ও মানবিক ভূমিকা
বাংলাদেশ অতীতেও বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও উদ্ধারকারী দল সহায়তা করেছিলো। একইভাবে ২০০৮ সালে মিয়ানমারে সাইক্লোন ‘নার্গিস’-এ ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য পাঠিয়েছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ আরও সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগের এ সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা ও মানবিক মূল্যবোধই পারে সংকট মোকাবিলা করতে।
সবার দেশ/কেএম