Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৯:৪৭, ১ এপ্রিল ২০২৫

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ইউনূসের বক্তব্যে তোলপাড় ভারত

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বকশি দাবি করেছেন, ভারত বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে এবং তা করার সময় কোনও মানচিত্রগত সুবিধা নেয়নি। কিন্তু এখন বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান শিলিগুড়ি করিডোরকে ব্যবহার করে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে।

সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ইউনূসের বক্তব্যে তোলপাড় ভারত
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন। তার বক্তব্যে ভারতের নীতিনির্ধারক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, তিনি বলেছেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত (ল্যান্ডলকড)। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কোনও উপায় নেই। আমরাই এ অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’

ড. ইউনূসের এ মন্তব্যকে ভারতের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহল হুমকি হিসেবে দেখছে। যদিও দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে ভারতের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত হওয়ার তাৎপর্য আসলে কী?’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি প্রধান ড. ইউনূসের মন্তব্যকে ‘অবাক করা’ বলে অভিহিত করেছেন। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক। এ ধরনের মন্তব্য করার কোনো অধিকার তার নেই।

তিনি আরও বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারত ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এ অঞ্চলের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকারের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচিত হয়েছে। এটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তিও রয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বকশি এ মন্তব্যকে আরও উগ্রভাবে গ্রহণ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে এবং তা করার সময় কোনও মানচিত্রগত সুবিধা নেয়নি। কিন্তু এখন বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান শিলিগুড়ি করিডোরকে ব্যবহার করে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে।

বকশি আরও বলেন, বাংলাদেশ যদি আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে অনাগ্রহী হয়, তবে তারাও বঙ্গোপসাগরের সুবিধা পাবে না। ভারত সরকার এ বিষয়ে অবগত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ড. ইউনূসের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মো. ইউনূসের ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে স্থলবেষ্টিত বলে উল্লেখ করা এবং বাংলাদেশকে সমুদ্রের অভিভাবক হিসেবে দাবি করা আপত্তিকর ও নিন্দনীয়।

বিশ্বশর্মা আরও বলেন, এ মন্তব্য ভারতের কৌশলগত চিকেনস নেক করিডোরের দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। আমাদের এখনই বিকল্প পথের সন্ধান করা উচিত।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও ড. ইউনূসের বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। কংগ্রেসের গণমাধ্যম ও প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা বলেন, বাংলাদেশ ভারতকে ঘিরে ফেলতে চীনকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। বাংলাদেশের এ মনোভাব উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্য ভারতের কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারতের সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না দিলেও দেশটির রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

তথ্যসূত্র: দ্য উইক, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য হিন্দু।

সবার দেশ/কেএম