সহযোগীদের খবর
সাধারণ মানুষ চায় তিনি আরো অন্তত ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক, সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সাফল্য
আমেরিকার অতিরিক্ত শুল্কারোপের বিষয়েও ড. ইউনূসের কৌশল একটা পজিটিভ ফলাফল বয়ে আনবে বলে অনেকেরই ধারণা। ইতোমধ্যে তিনি গতকাল শনিবার এ সংক্রান্ত বিষয় আলোচনার জন্য জরুরি মিটিং ডেকেছেন। অনেকের মতে, ড. ইউনূস চাইলে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার আজকের প্রধান শিরোনাম ‘সাধারণ মানুষ চায় তিনি আরো অন্তত ৫ বছর ক্ষমতায় থাকুক, সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের সাফল্য’। খবরে বলা হয়, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় একটি ঘটনার পর সারাদেশে যেখানে বিশাল বিশৃঙ্খলা থাকার কথা, সেখানে সরকার দারুণভাবে সব পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ড. ইউনূস একটার পর একটা সফলতা অর্জন করে চলেছেন।
মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে চীন ও ভারত কূটনীতিতেও তিনি দারুণ চমক দেখিয়ে এখন সারাদেশের মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষের চাওয়া ড. ইউনূস আরও অন্তত: চার বছর ক্ষমতায় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টা যাবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দু-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের পরিস্থিতি শুধু সামাল দেওয়াই নয়, দারুণভাবে দেশ পরিচালনা করে চলেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
আলাপকালে সাধারণ মানুষ বলেছেন, বরাবরই দেশের গণমানুষের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার বিষয় হয়ে থাকে নিত্য পণ্যমূল্য। অতীতে আমরা দেখেছি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই পাগলা ঘোড়ার লাগাম পরাতে পারেনি কোনো সরকারই। এ কারণে প্রায় সময়ই পত্রিকার পাতা ভরা থাকত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনগণের নাভিশ্বাস, ক্রেতাদের হাহাকার-এ জাতীয় নানা সংবাদ শিরোনামে। কিন্তু ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার গত ৫৪ বছরের ইতিহাস ভঙ্গ করে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সেই পণ্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ায় লাগাম পরিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে রোজার মাসে সরকার সদাসর্বদা সতর্ক থেকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। রোজায় নিত্যপণ্যের বাজার এর আগে এতটা নিয়ন্ত্রণে থাকতে দেখেনি কেউ।
কথায় আছে, এ দেশে মানুষের মূল্য কমে, আর জিনিসপত্রের দাম সবসময়ই বাড়ে। গত ১৬ বছর ধরে দ্রব্যমূল্য জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। বেশি দিন না, ছয় মাস আগেও ১৫ টাকা পিস দরে লোকজন ডিম কিনে খেয়েছে। এখন সেই ডিম কেনা যাচ্ছে আট টাকা পিস দরে! মানে দাম প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি! এত সস্তায় যে ইহজন্মে আমরা ডিম খেতে পারব, সেটা কি ছয় মাস আগেও ভেবেছিলাম আমরা? এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, ঈদ বা রোজার মতো কোনো উপলক্ষ্য এলেই দামের সেঞ্চুরি বা ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলে পেঁয়াজ। এখন সেই পেঁয়াজ ৪৫ টাকার আশপাশে! লাল চিনি মাস ছয়েক আগেও ছিল ১৭০ টাকা। এখন সেই চিনি কেনা যায় ১৪০ টাকার নিচে। দু-একটি নিত্যপণ্য বাদে সব পণ্যেরই দাম স্থিতিশীল রয়েছে বা কমেছে। বাজার হিসাবের ফর্দ নিয়ে পুরো রোজার মাসজুড়েই এক রকমের স্বস্তি নিয়ে কাটিয়েছে দেশের মানুষজন।
এদিকে রোজার শেষে ঈদুল ফিতরের উৎসবও আরও রঙিন হয়ে ধরা দিয়েছে দেশবাসীর কাছে। এদেশে চিরায়ত চিত্র সড়কে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা যানবাহনের যাত্রীদের ভোগান্তি। এবার সেই দুর্দশার চিত্রও উধাও! ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িফেরা মানুষের প্রধান রুট ঢাকা-উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। হাইওয়ে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কঠোর শ্রম দিয়ে মহাসড়ক যানজট মুক্ত রেখেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে অন্যান্য মহাসড়কেও। প্রশাসনের আন্তরিক তদারকির কারণে মহাসড়কে নেই যানবাহনের বাড়তি চাপ, দুই-একটি ঘটনা ছাড়া স্বস্তির ঈদযাত্রা দেখা গেছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালের যাত্রীদের অনেকে বলছেন, সড়কে যা ঘটেছে, তা বিশ্বাসই হচ্ছে না তাদের। লাইফে এত নির্বিঘেœ ঈদযাত্রা তারা করতে পারেনি কখনও। ঈদের মধ্যে গত ৪০ বছরেও এমন দৃশ্য দেখেনি দেশের মানুষ।
সড়কের সঙ্গে সঙ্গে রেলেও দেখা গেছে সুশৃঙ্খলা। এতে করে যাত্রীদের মধ্যেও প্রশান্তির ছোঁয়া বিরাজ করছে। নিয়ম করে ঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে সব ট্রেন। স্টেশনে নেই কোনো বাড়তি যাত্রীর চাপ। টিকিট কালোবাজারিরা লাপাত্তা! সব মিলিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের টিকিট পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে আগের সেই চিরায়ত হাহাকার কিংবা ক্ষোভ এবার দেখা যায়নি। শুধু বাজার নিয়ন্ত্রণ বা ঈদে ঘরমুখো মানুষকে স্বস্তি দেওয়াই নয়, প্রবাসী আয় টানতেও গত কয়েক মাসে প্রবাসীদের দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে এ সরকার। মার্চ মাসের রেমিট্যান্সের দিকে তাকালে এটার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিন বিলিয়ন ডলার মানে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে এ মাসে। ঈদ উপলক্ষে রেমিট্যান্স কিছুটা বাড়তে পারে-এমন ধারণা ছিল আগে থেকেই। কিন্তু এভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ হাই জাম্প দিয়ে আকাশে উঠে যাবে, এমনটা ভাবতেও পারেনি কেউ।
ধুঁকতে থাকা নাজুক ব্যাংকগুলোকেও সরকার দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বুক উঁচু করে। সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের স্বার্থ বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে বলে জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের পাশে সরকার আছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা উন্নয়নে এগুলোর পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এরপরই আস্থা ফেরে ব্যাংকগুলোতে।
ব্যাংক খাত থেকে গত ১৭ বছরে বিভিন্নভাবে বড় ধরনের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। মূলত সাত-আটটি ব্যাংক থেকেই এই অর্থ বের হয়ে গেছে। ফলে এসব ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়েছিল। সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে এসব ব্যাংককে দেয়নি। টাকা ছাপিয়ে দিলে তাতে করে দুই লাখ কোটি টাকা ছাপাতে হতো। এতে মূল্যস্ফীতি, ডলারের দাম-সবকিছু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যেত। এরপর বদলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে সীমিত আকারে টাকা দিয়েছে। এসব ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা আমানত হিসেবে পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে টাকার নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি)। এভাবেই ব্যাংক খাতের বড় রকমের ঝুঁকি কাটিয়ে তুলেছে ইউনূস সরকার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, একটা দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা। সেই হিসাবে ড. ইউনূসের প্রতি জনগণের আস্থাটা যে দিনকে দিন বাড়ছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এর প্রমাণও মিলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিউজফিডে লাখো মানুষ ড. ইউনূসের দেশ পরিচালনার প্রশংসা করছেন। অনেকে লিখছেন, এই সরকারকে আরও অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখা দরকার। কেউ কেউ লিখছেন, অন্তত দশ বছরের আগে ড. ইউনূস যেন দায়িত্ব না ছাড়েন। দেশের প্রধান প্রধান খাতের আমূল সংস্কার করার পরই যেন তিনি নির্বাচন দেন। কারণ, অতীতের কোনো সরকারই কথা রাখেনি। এবার রাষ্ট্র সংস্কারের এই সুযোগ ছাড়া যাবে না।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকে ড. ইউনূস প্রসঙ্গে লিখছেন, ‘এই লোক রোজায় দ্রব্যমূল্য ঠিক রেখেছে; সারা বছর যেখানে এই সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে, সেখানে উনি থাকায় বরং দ্রব্যমূল্য আশাতীত ভাবে কমেছে। ঈদের আগের চারদিন বাড়ি ফেরে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ; মানে প্রতিদিন ৩০ লাখ মানুষ ... কিন্তু এবার কোথাও নেই ভোগান্তি, নেই ট্রেন-বাস-লঞ্চের কোন শিডিউল বিপর্যয়। এই ইয়াং হার্টের মানুষটা বেঁচে থাকুক অনেকদিন ....। তার ক্ষমতায় থাকতে পারাটাই যে দেশের জন্য এক সংস্কার।
কূটনৈতিক সাফল্য
ইউনূস সরকারের ছয় মাসের অন্যতম বড় সাফল্য আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে এবং মানবাধিকার ইস্যুতে সরকার তার নীতি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা চলছে, যা ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার নতুন সিদ্ধান্ত এসছে। ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রথম ধাপে ফিরিয়ে নিতে সম্মতি দিয়েছে মিয়ানমার সরকার।
কূটনীতিকদের মতে, বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে ইউনূস সরকার কৌশলী ভূমিকা রাখছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। বিশেষ করে ভারতকে পাশ কাটিয়ে তিনি চীনে যাওয়ার পর চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে যে চমক দেখিয়েছেন-তাতে ভারত সরকারের মাথা খারাপ হওয়ার দশা। সে কারণেই সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ড. ইউনূসের সাথে ৪০ মিনিট দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে ইগিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, ইউনূস- মোদি বৈঠকে হাসিনাকে ফেরানোর দাবিতেও মোদিকে নমনীয় দেখা গেছে। তার আচরণে মনে হয়েছে তিনি স্বৈরাচারি হাসিনাকে ফেরত পাঠাবেন। আগামীতে তার বিচার এদেশের মাটিতেই হবে। এটাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক বিজয়। যে বিজয়ের নায়ক ড. ইউনূস নিজেই।
আমেরিকার অতিরিক্ত শুল্কারোপের বিষয়েও ড. ইউনূসের কৌশল একটা পজিটিভ ফলাফল বয়ে আনবে বলে অনেকেরই ধারণা। ইতোমধ্যে তিনি গতকাল শনিবার এ সংক্রান্ত বিষয় আলোচনার জন্য জরুরি মিটিং ডেকেছেন। অনেকের মতে, ড. ইউনূস চাইলে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
অভিজ্ঞজনদের মতে, ড. ইউনূস ধীরে ধীরে স্টেটসম্যান হওয়ার দিকে এগোচ্ছেন। তার চলার গতি ধীর এবং মাপা। তবে তার গন্তব্য এক প্রকার নিশ্চিত। ড. ইউনূস এমন এক অবস্থায় আছেন, তার আর পাওয়ার বা চাওয়ার কিছু নেই। দুনিয়ার তাবৎ সম্মানের যা যা পাওয়া সম্ভব, সেসবের সবগুলোই তিনি ইতোমধ্যেই অর্জন করে ফেলেছেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন- যা অতীতের কোনো সরকারই পারেন’।
সবার দেশ/কেএম