Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ৭ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৯:৪৬, ৭ এপ্রিল ২০২৫

‘৩৭% বাড়তি শুল্ক স্থগিত করুন’

বাড়তি শুল্ক স্থগিত চেয়ে ট্রাম্পকে ইউনূসের চিঠি

বিশ্ব বাণিজ্য ফোরামের সাবেক সদস্য এক বিশ্লেষক বলেন, চিঠিতে ইউনূস যে ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা কেবল অর্থনৈতিক নয়—যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরের রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও চাপে ফেলবে, বিশেষ করে কৃষক ভোটব্যাংক ঘিরে।

বাড়তি শুল্ক স্থগিত চেয়ে ট্রাম্পকে ইউনূসের চিঠি
ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি বাঁচাতে ট্রাম্পকে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে অনুরোধ—বাংলাদেশি পণ্যে নতুন ৩৭% পাল্টা শুল্ক অন্তত তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হোক। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমেরিকান অর্থনৈতিক স্বার্থে একগুচ্ছ ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

৩৭% শুল্কের ধাক্কা: রফতানির ‘লাইফলাইন’ এখন ঝুঁকিতে

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরেই বাণিজ্য রক্ষণশীলতা আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করছেন। তার ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড় শুল্ক ১৫% থেকে বাড়িয়ে ৩৭% করে যুক্তরাষ্ট্র।
এতে তৈরি পোশাকসহ রফতানি খাত সরাসরি ঝুঁকির মুখে পড়ে। বিশেষ করে এ চাপ এমন সময়ে আসছে, যখন ইউরোপে জিএসপি সুবিধাও অনিশ্চয়তার মধ্যে।

চিঠিতে কী বললেন ড. ইউনূস?

চিঠিতে ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেন, আমরা প্রথম দেশ যারা আপনার (ট্রাম্পের) ঘোষণার পর উচ্চ প্রতিনিধি ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছি। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের বাজারে আমেরিকান রফতানি বাড়াতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এলএনজি আমদানির বহু বছরের চুক্তি, স্টারলিংক চালু, এবং মার্কিন কৃষিপণ্যে শূন্য শুল্ক দেয়ার মতো বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।

চিঠির মূল প্রতিশ্রুতি:

  • মার্কিন তুলা, গম, সয়াবিন, স্ক্র্যাপ ধাতুতে শূন্য শুল্ক
  • ৫০% শুল্ক কমানো হবে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসা সরঞ্জামে
  • স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু হয়েছে ইতোমধ্যে
  • বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং সুবিধা মার্কিন তুলার জন্য

যুক্তরাষ্ট্রের লাভ কোথায়?

ড. ইউনূস কৌশলে চিঠিতে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার সঙ্গেই নিজের প্রস্তাবকে জুড়ে দেন। বলেন, আমাদের পরিকল্পনার মাধ্যমে মার্কিন কৃষকের আয় বাড়বে। আপনার অর্থনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমরাই প্রথম সমর্থন দিয়েছি।

রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট

বাংলাদেশ রফতানি করে শুধু বাজারই নিচ্ছে না, মার্কিন রফতানি বাড়ানোর এক্সপেরিমেন্টাল জোন হিসেবেও কাজ করছে।

বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক চিঠি নয়—একটি নরম সুরে উচ্চ-ক্ষমতার বাণিজ্য কূটনীতি। বিশ্বব্যাপী যখন যুক্তরাষ্ট্র রফতানি ঘাটতি মেটাতে ‘শুল্ক-অস্ত্র’ ব্যবহার করছে, তখন বাংলাদেশ এ চাপের জবাব দিচ্ছে অধিকতর আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

বিশ্ব বাণিজ্য ফোরামের সাবেক সদস্য এক বিশ্লেষক বলেন, চিঠিতে ইউনূস যে ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা কেবল অর্থনৈতিক নয়—যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরের রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও চাপে ফেলবে, বিশেষ করে কৃষক ভোটব্যাংক ঘিরে।

তবে ঝুঁকি কী?

  • বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা হ্রাস পাবে যুক্তরাষ্ট্রে
  • বাণিজ্য ভারসাম্য আরও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ঝুঁকে যাবে
  • মার্কিন ‘শুল্ক রাজনীতি’ আরও প্রণোদিত হতে পারে

এটা শুধু শুল্ক নয়, ভিন্ন কূটনৈতিক ভাষায় বাঁচার লড়াইৎ। ড. ইউনূসের চিঠি একটি অর্থনৈতিক ‘SOS’। তবে এটিকে আত্মসমর্পণ বলা যাবে না—বরং এটি একটি বুদ্ধিদীপ্ত ট্যাকটিক্যাল রিট্রিট, যেখানে বাংলাদেশ বলে দিচ্ছে, আমরা তোমার জন্য বাজার খুললাম, এখন দয়া করে আমাদের গলা চেপে ধরো না।

সবার দেশ/কেএম