Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৩১, ৯ এপ্রিল ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আর ছাড় নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কূটনৈতিক জোনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল জোরদার করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আর ছাড় নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফাইল ছবি

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার আর কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় বলে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যে ভাঙচুর, লুটপাট ও নাশকতার ঘটনায় র‌্যাব ও পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ক্যামেরার সহায়তায় জড়িত বাকিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিক্ষোভ থেকে হামলা ও লুটপাট:
  
গত সোমবার ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে গাজীপুর, কক্সবাজার, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। কেএফসি, পিৎজা হাট, বাটাসহ এক ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, হামলার সময় পুলিশ ও র‌্যাব নিষ্ক্রিয় ছিলো এবং কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। একাধিক রেস্তোরাঁর মালিক জানিয়েছেন, পুলিশ আশপাশে থাকলেও হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে লুটপাট চালাতে দিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের আগে থেকে সতর্কতা ও প্রস্তুতি থাকা উচিত ছিলো। এ ব্যর্থতা সরকারের এবং এটা দেশের জন্য বদনাম ডেকে এনেছে। তিনি সরকারের দায়িত্বশীলতার অভাবকে দায়ী করে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানান।

সরকারের কঠোর অবস্থান:

স্বরাষ্ট্ম্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যা ঘটেছে, তার জন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেফতা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় আগাম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, আগামী পহেলা বৈশাখ ও ‘মার্চ ফর গাজা’র মতো বড় জনসমাগমে নাশকতা প্রতিরোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, বর্তমানে কোনো বড় নিরাপত্তা হুমকি নেই।

নিরাপত্তা জোরদার:

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, পহেলা বৈশাখ উদযাপনে রমনা বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভাযাত্রা, হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। শোভাযাত্রার আগে-পিছে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা হবে। কূটনৈতিক জোনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল জোরদার করা হচ্ছে।

বিনিয়োগের পরিবেশ ও সরকারের চ্যালেঞ্জ:  

দেশে চলমান বিনিয়োগ সম্মেলনের মধ্যে এসব ঘটনা সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিদেশি ব্যবসায়ীরা দেশে অবস্থান করছেন এবং বিনিয়োগের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা বিনিয়োগের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। ফলে সরকার অপরাধীদের কঠোর শাস্তি ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়েছে।

অভিযান ও গ্রেফতার:  

পুলিশ জানিয়েছে, হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬০ জন গ্রেফতার হয়েছে, এবং দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লুটপাটকারী, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আগামী পরিকল্পনা:  

আগামী শনিবার ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা রোধে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশ ও র‌্যাব জানিয়েছে, বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা এবং নাশকতা ঠেকানোই তাদের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য ইউনিফর্মধারী বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও মোতায়েন থাকবে।

এ ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা ও প্রস্তুতির ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তবে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা পরিস্থিতি সামাল দিতে কতটা কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সবার দেশ/কেএম