Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৪৬, ৯ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণায় নতুন মাইলফলক

নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি ঢাকার 

নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি ঢাকার 
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ৫৪তম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’ স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যা নাসার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। 

এ ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব মহাকাশ গবেষণার মঞ্চে নিজেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করল।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠান:

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষা সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন এ চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেন। এ অনুষ্ঠান বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

আর্টেমিস অ্যাকর্ডসের তাৎপর্য:

২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত আর্টেমিস অ্যাকর্ডস হলো একটি অ-বাধ্যতামূলক চুক্তি, যা মহাকাশের শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করে। এটি ১৯৬৭ সালের আউটার স্পেস ট্রিটি, রেজিস্ট্রেশন কনভেনশন এবং অ্যাস্ট্রোনট রেসকিউ অ্যান্ড রিটার্ন এগ্রিমেন্টের মতো আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভিত্তিতে গঠিত। 

প্রতিরক্ষা সচিব আশরাফ উদ্দিন বলেন, এ চুক্তি মহাকাশে স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীল আচরণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি কাঠামো প্রদান করে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ১৯৮০ সালে স্পারসো (বাংলাদেশ স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানে কাজ শুরু করে এবং তখন থেকেই আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলছে।

বাংলাদেশের জন্য সুযোগ:  

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এ স্বাক্ষর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। তিনি আরও জানান, এ চুক্তির মাধ্যমে স্পারসো এবং নাসার মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে, যা বাংলাদেশের মহাকাশ মিশনকে শক্তিশালী করবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এ চুক্তির মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণা, ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার অংশ হলো, যা দেশের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্যও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে, বিশেষ করে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট: 

২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়াসহ ৫৩টি দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলো। বাংলাদেশের যোগদানের মাধ্যমে এ সম্মানজনক আন্তর্জাতিক মহাকাশ জোট আরও সমৃদ্ধ হলো। নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জ্যানেট পেট্রো এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের এ যোগদান মহাকাশ অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে এবং একে অপরের থেকে শিখতে প্রত্যাশী।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:  

এ চুক্তি বাংলাদেশকে বিশ্ব মহাকাশ সম্প্রদায়ের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত করবে। এটি দেশের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নাসার প্রশিক্ষণ, বৃত্তি ও গবেষণার সুযোগ তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণার এ নতুন যাত্রা কেবল জাতীয় উন্নয়নই নয়, বরং বিশ্ব শান্তি ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতেও অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সবার দেশ/কেএম

সম্পর্কিত বিষয়: