উন্নয়নে নতুন দিগন্ত
এনডিবি’র ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ ঘোষণা
একটি চীনা কোম্পানির সাড়ে তিন বছর ধরে লাইসেন্স না পাওয়ার প্রসঙ্গে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা শুনেছি একটি বৃহৎ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এ সমস্যার সম্মুখীন। তবে কী কারণে এটি ঘটেছে, তা এক সপ্তাহ পর জানাতে পারবো।

ব্রিকস জোটের নেতৃত্বাধীন নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে আরও এক বিলিয়ন ডলার (১০০ কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
এ ঘোষণা দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নতুন গতি সঞ্চার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এনডিবি বাংলাদেশে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, এবং নতুন এ তহবিল সামাজিক অবকাঠামোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিনিয়োগের পরিধি ও সম্ভাবনা:
চৌধুরী আশিক জানান, এনডিবি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। নতুন ঘোষিত এই এক বিলিয়ন ডলার হাসপাতাল, হাউজিং এবং অন্যান্য সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি বলেন, ব্রিকস ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক। সম্প্রতি ওয়াসার সঙ্গে একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এছাড়া তারা সরকারি খাতের বাইরেও অর্থায়ন করতে আগ্রহী।
বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও প্রশ্ন:
বিডা চেয়ারম্যান জানান, বিনিয়োগকারীরা মূলত দুটি বিষয়ে জানতে চাইছেন। প্রথমত, বাংলাদেশে ব্যবসা করলে তারা কী ধরনের সুবিধা পাবেন। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে যারা ব্যবসা করছেন, তারা কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং সেগুলো সমাধানে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানতে চাইছেন। আমরা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছি এবং আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে এগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করবো।
একটি চীনা কোম্পানির সাড়ে তিন বছর ধরে লাইসেন্স না পাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি একটি বৃহৎ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এ সমস্যার সম্মুখীন। তবে কী কারণে এটি ঘটেছে, তা এক সপ্তাহ পর জানাতে পারবো।
বিনিয়োগ সম্মেলনের লক্ষ্য:
চৌধুরী আশিক জানান, এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য এখনই বিনিয়োগ আনা নয়, বরং নেটওয়ার্কিংয়ের ওপর জোর দেয়া। তিনি বলেন, আমরা এখানে নেটওয়ার্কিংকে প্রাধান্য দিচ্ছি। বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক।
গত ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ চারদিনব্যাপী সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ প্রায় ৪০টি দেশের বিনিয়োগকারী ও করপোরেট প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের পাশাপাশি একটি আমেরিকান ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেছে এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে বৈঠক করেছেন।
ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ও ট্যারিফ চ্যালেঞ্জ:
ইজ অব ডুয়িং বিজনেস প্রসঙ্গে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এ সূচক অনেক আগে করা হয়েছে। এখন আর এটি অনুসরণ করা উচিত নয়। প্রতিটি দেশেরই কিছু না কিছু সমস্যা আছে। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্যারিফের সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী। প্রধান উপদেষ্টা ট্রাম্প প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন, যা আমরা প্রকাশ করেছি।
উন্নয়নে নতুন দিগন্ত:
এনডিবি’র এ বিনিয়োগ বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতে নতুন গতি আনবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে।
সবার দেশ/কেএম