সুনামগঞ্জে পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘খালি পয়সা খান, কাম তো করেন না’

সুনামগঞ্জের খরচার হাওরের রাবার ড্যাম পরিদর্শনে গিয়ে একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ফোনে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, পয়সা খাবেন, পকেটে ঢুকাবেন খালি, কাজ করবেন না। শোনেন, না হলে কিন্তু আপনারে রিপেয়ার করে দেবো।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) পরিদর্শনের সময় ওই মন্তব্য করেন তিনি, যা দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
রাবার ড্যামটি সম্প্রতি লিক করার অভিযোগে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ লিকের ফলে আগাম পানিতে বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেখানে যান। পরিদর্শনকালে একজন প্রকৌশল কর্মকর্তাকে ফোনে তিনি তিরস্কার করে বলেন— আপনি জানতেন না আমরা আসবো? রাবার ড্যাম লিক হয়েছে কেনো? কয়দিন লাগবে ঠিক করতে? সাত দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করলে কিন্তু ব্যবস্থা নেবো।
তিনি আরও বলেন, আপনারা পয়সা নেন, কিন্তু সময়মতো কাজ করেন না। দেশের সম্পদের ক্ষতি করছেন, এটা মেনে নেয়া হবে না।
একই দিনে সকালে তিনি সিলেটের এয়ারপোর্ট থানা পরিদর্শনে যান। সেখানে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন এবং বলেন, আমি আগেই বলেছি এসব হবে না। এগুলো বন্ধ করুন। প্রটোকল করতে করতে তোমাদের সময় শেষ, মূল কাজ করতে পারতেছো না।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি গালিচা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন, এবং সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার রেজাউল করিমকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন তোলেন, এগুলো কেনো রাখা হয়েছে? আমি তো নিষেধ করেছি।
সিলেটের বিমানবন্দর থানায় পরিদর্শনকালে তিনি পুলিশের আবাসন, রেশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে কথা বলেন, পুলিশের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু চাই। কিন্তু তাদের থাকা-খাওয়ার অবস্থা খুবই করুণ। এ বিষয়ে সাংবাদিকদেরও সরব হওয়া উচিত, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারে আমরা সচেষ্ট। অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে, আরও হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যে যারা আসামি ছিনিয়েছে, তাদের অনেকে আইনের আওতায় এসেছে।
বাংলাদেশে জনপ্রশাসনে দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ‘প্রটোকল-প্রীতি’ সংস্কৃতির মধ্যে এ ভিন্নধর্মী অবস্থান ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি ও গাফিলতির বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়া প্রশাসনিক দায়িত্বশীলদের সংখ্যা খুবই কম। এ ঘটনার মাধ্যমে এক ধরনের ‘জিরো টলারেন্স’ বার্তা দিয়েছেন তিনি। এতে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নে নতুন আলোচনার জন্ম নিয়েছে।
সবার দেশ/কেএম