Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:০২, ১১ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ০৩:১২, ১১ এপ্রিল ২০২৫

ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল 

বাংলাদেশকে আত্ম-নির্ভরশীলতার সুযোগ এনে দিলো মোদি?

বাংলাদেশকে আত্ম-নির্ভরশীলতার সুযোগ এনে দিলো মোদি?
ছবি: সবার দেশ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হঠাৎ করে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের জন্য ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠানোর ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছেন। দিল্লির এ একতরফা সিদ্ধান্তে যেমন জেগে উঠেছে রাজনৈতিক কূটনীতি, তেমনি দেশের ভিতরে ওঠেছে প্রশ্ন—বাংলাদেশ কি এবার ভারত-নির্ভরতা কাটিয়ে প্রকৃত স্বাধীন পথেই হাঁটছে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির এ সিদ্ধান্ত ভারতের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এটি যেন বাঘের লেজ ধরে টান দেয়ার নামান্তর।

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: হুমকি না বরং সম্ভাবনা?

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন আশ্বস্ত করেছেন, এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে না। বিকল্প রুট ইতোমধ্যে কার্যকর হচ্ছে। বিশেষ করে মালদ্বীপ হয়ে আকাশপথে পণ্য পাঠানোয় কেজিপ্রতি ১ ডলার পর্যন্ত খরচ কমছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সভাপতি কবির আহমেদ জানান, কোলকাতা-কলম্বো হয়ে রফতানি এখন আর সময়সাশ্রয়ী বা লাভজনক নয়। তাই ব্যবসায়ীরা মালদ্বীপকেই পছন্দ করছেন।

বিকল্প পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

চীন সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগর ঘিরে একটি নতুন আঞ্চলিক বাণিজ্য জোট গঠনের প্রস্তাব রেখেছেন। বেইজিংয়ে দেয়া এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের একমাত্র সমুদ্রদ্বার হচ্ছে বাংলাদেশ। আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান কেবল স্ট্র্যাটেজিক নয়, এটি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি।

এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের করাচি বন্দর ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-মংলা বন্দরের মধ্যে সরাসরি রুট চালু হয়েছে, যা শেখ হাসিনার শাসনামলে বন্ধ ছিলো। চালু হয়েছে ইসলামাবাদ-ঢাকা ফ্লাইট, নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে ইরান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে।

‘বন্ধুত্বের নামে দখলনীতি’ – ভারতের ভূমিকায় প্রশ্ন

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ কার্যত দিল্লির প্রটেক্টরেট হয়ে পড়েছিলো। দিল্লির ‘সাউথ ব্লক’ ঠিক করতো, কারা হবেন বাংলাদেশের সচিব, কোন বিদেশি কোম্পানিকে কোন প্রকল্প দেয়া হবে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিদেশ সফরের পূর্বে ভারতীয় অনুমোদনও নিতে হতো—এমন অভিযোগ বহুদিনের।

দেশের মানুষ ভুলে যায়নি ২০১৯ সালে ভারতের একদিনের নোটিশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর বাংলাদেশের বাজারে অগ্নিমূল্যের অভিজ্ঞতা। কিংবা করোনার সময় আগাম টাকা নিয়েও ভ্যাকসিন না পাঠানোর নিষ্ঠুরতা। এমনকি ধর্মীয় উৎসবের সময় গরু রফতানি বন্ধ করে বাংলাদেশের পশু খাতকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছিলো ভারত। তবে আশাব্যঞ্জকভাবে বাংলাদেশ আজ এসব খাতে প্রায় স্বনির্ভর।

‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ আন্দোলন : গণমানসের নতুন প্রতিক্রিয়া

ঢাকায় চলমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ভারতীয় স্টলগুলো জনশূন্য। ঈদেও ভারতীয় পোশাক কেনার প্রবণতা ছিলো রেকর্ড কম। ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন’ এখন আর শুধু রাজনৈতিক স্লোগান নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি সচেতন নাগরিক আন্দোলন।

একই সঙ্গে জনদাবি উঠেছে—শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সঙ্গে হওয়া সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। দিল্লিকে দেয়া করিডোর, জলপথ, সড়ক, বন্দর ব্যবহারসহ সব সুবিধার হিসাব জনগণের সামনে আনতে হবে। এসব চুক্তি বাতিলের দাবিও উঠেছে দেশের বিভিন্ন নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবী মহল থেকে।

ভারত নিজেই যে ‘প্রতিবেশী বিপর্যয় নীতি’ অনুসরণ করছে, তার প্রমাণ শুধু বাংলাদেশ নয়—নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালদ্বীপও একে একে পেয়েছে। এবার বাংলাদেশও দিল্লির মুখাপেক্ষী না হয়ে বিকল্প পথ তৈরি করছে।

নরেন্দ্র মোদি হয়তো ভাবছিলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করবেন। বাস্তবে তিনি চাপ দিয়েছেন এমন একটি জাতিকে, যারা শত বছর ধরে দখল, বৈষম্য আর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়ে টিকে আছে। বাঘের লেজে হাত দিলে যা হয়, ভারত হয়তো এবার তা হাড়ে হাড়ে টের পাবে।

বাংলাদেশের প্রতি ভারতের বৈষম্যমূলক আচরণের তথ্যছক:

  • পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ (২০১৯)
  • গরু রফতানি নিষেধাজ্ঞা (২০১৪)
  • বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি হস্তক্ষেপ (২০০৮, ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪)
  • করোনা ভ্যাকসিন প্রতারণা (২০২০)
  • চুক্তিবদ্ধ করিডোরে ভারতীয় একচ্ছত্র প্রবেশাধিকার
  • সীমান্ত হত্যাকাণ্ড (প্রতিবছর ৫০+ জন নিহত)
  • বাংলাদেশের কসাইক্ষ্যাত মাফিয়া হাসনিকে আশ্রয় প্রদান (২০২৪)
  • হাসিনার মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা (চলমান)
  • ভিসা বন্ধ (চলমান)
  • ট্রানশিপমেন্ট বন্ধ (চলমান)

সাময়িক এ সংকট শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। এবার সময় ইতিহাসের দায় শোধ করার।

সবার দেশ/এমকেজে