Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১২ এপ্রিল ২০২৫

ইসরায়েলি নৃশংসতার বিরুদ্ধে ঢাকায় ঐতিহাসিক সমাবেশ

লাখো মানুষের বুলন্দ গর্জনে ‘মার্চ ফর গাজা’ পালিত

লাখো মানুষের বুলন্দ গর্জনে ‘মার্চ ফর গাজা’ পালিত
ছবি: সবার দেশ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান গণহত্যা ও বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক গণজমায়েতে লাখো মানুষের উপস্থিতি এক ঐতিহাসিক সংহতির দৃশ্য রচনা করেছে। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশে’র আয়োজনে শনিবার (১২ এপ্রিল) এ কর্মসূচি, ঘোষণাপত্র পাঠ, স্লোগান, বক্তৃতা ও মোনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা গাজাবাসীর পাশে বাংলাদেশের অটল সমর্থনের প্রতিফলন।

কর্মসূচির শুরু ও পরিবেশ
  
বিকাল সোয়া ৩টায় বিখ্যাত কারী আহমদ বিন ইউসুফের মর্মস্পর্শী কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি শুরু হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হওয়া লাখো মানুষের মধ্যে ছিলো নারী-পুরুষ, তরুণ-প্রবীণ, ছাত্র-শিক্ষক, রাজনীতিক-সামাজিক কর্মীসহ সমাজের সব শ্রেণির প্রতিনিধি। ফিলিস্তিনের পতাকা, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে ঢাকা মাঠে ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই’, ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করো’ ধরনের স্লোগানে মুখরিত ছিল পরিবেশ।

এর আগে সািল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বা, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ, কার বাইক নিয়ে লাখো লাখো জনতা ঢাকামুখী হয় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে। বিভিন্ন রকম শ্লোগান মুখরিত তাদের প্রথ্যেকের হাতে ছিলো নানারকম শ্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, ক্যাপ, ব্যান্ড ইত্যাদি।

ঘোষণাপত্র ও মূল দাবি

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জনতার পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সব ধরনের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জোরালো আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া, গাজায় অবিলম্বে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ড বন্ধ, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপিত হয়। ঘোষণাপত্রে ফিলিস্তিনিদের ওপর জুলুমকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।

বক্তৃতা ও সংহতি প্রকাশ

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও গাজার মানুষের মানবাধিকারের প্রশ্নে আমরা এক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক বাংলাদেশি তাদের পাশে আছে। তিনি গাজার জনগণের ওপর চলমান জুলুমকে ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ হিসেবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ঐক্য গড়ার আহ্বান জানান।

ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী স্লোগানের মাধ্যমে জনতাকে উদ্দীপ্ত করে বলেন, ফিলিস্তিন আমাদের ভাই, তাদের রক্তের সঙ্গে আমাদের হৃদয় মিশে আছে। আমরা তাদের একা ছাড়বো না। তার আহ্বানে জনতা ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ও ‘ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা চাই’ স্লোগানে মুখর হয়।

মোনাজাত ও সমাপ্তি
 
বিকাল সোয়া ৪টায় মুফতি আব্দুল মালেকের পরিচালনায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাতে গাজার মানুষের মুক্তি, নিরাপত্তা ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য দোয়া করা হয়। হাজার হাজার মানুষের একযোগে হাত তুলে দোয়ায় অংশ নেয়ার দৃশ্য ছিলো আবেগঘন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ 

কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ; জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল করিম ও দক্ষিণের শফিকুল ইসলাম মাসুদ; গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান; জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ; বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন। তাদের উপস্থিতি কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য ও গণঐক্যের মাত্রা যোগ করেছে।

ঐতিহাসিক তাৎপর্য

‘মার্চ ফর গাজা’ গণজমায়েত শুধু ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশই নয়, বাংলাদেশের মানুষের মানবতার পক্ষে অবস্থানের এক শক্তিশালী বার্তা। আয়োজকরা জানান, এ সমাবেশের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের জনগণের নৈতিক অবস্থান পুনরায় স্পষ্ট হয়েছে। গাজার মানুষের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে ভবিষ্যতেও এ ধরনের কর্মসূচি চলবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দেন।

এ সমাবেশ ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের জনগণের ঐক্য ও সংহতির এক অমলিন দৃষ্টান্ত হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।

সবার দেশ/এমকেজে