Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

অভিযুক্ত শনাক্ত, গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি পুলিশের

জঙ্গি ছাত্রলীগ পুড়িয়েছে ‘ফ্যাসিবাদের মোটিফ’

জঙ্গি ছাত্রলীগ পুড়িয়েছে ‘ফ্যাসিবাদের মোটিফ’
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার জন্য তৈরি দুটি মোটিফে আগুন দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম রাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার (১৪ এপ্রিল) শোভাযাত্রা শুরুর আগেই তাকে গ্রেফতার করা হবে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে চারুকলা অনুষদে নববর্ষ উদযাপনের জন্য তৈরি দুটি মোটিফ—‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ এবং ‘শান্তির পায়রা’—আগুনে পুড়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে মুখে মাস্ক পরা এক যুবক চারুকলার তিন নম্বর গেটের দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি কালো টি-শার্ট ও খাকি রঙের প্যান্ট পরিহিত ছিলেন। প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই তিনি মোটিফে আগুন লাগিয়ে দ্রুত দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফটি আংশিক পুড়লেও ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ রোববার সংবাদমাধ্যমকে জানান, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম রাকিবকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রক্টর আরও জানান, ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী নববর্ষ উদযাপনের ওপর আঘাত হানার প্রচেষ্টা, যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।
 
ডিএমপি কমিশনার এস এম সাজ্জাদ আলী জানিয়েছেন, পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্তের অবস্থান শনাক্ত করেছে এবং সোমবার সকালের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর হামলা। আমরা দোষীকে আইনের আওতায় আনতে বদ্ধপরিকর। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা তদন্তে সহায়ক হবে।

চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, মোটিফ দুটি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার ফসল। এটি শুধু মোটিফ পোড়ানো নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার ওপর আক্রমণ। আমরা এর বিচার দাবি করছি। শিক্ষার্থীরা ঘটনার প্রতিবাদে রোববার দুপুরে চারুকলা প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশের আয়োজন করে, যেখানে তারা দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম রাকিবের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাকিব এর আগেও ক্যাম্পাসে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। 
 
এদিকে, আগুন দেয়ার ঘটনা সত্ত্বেও চারুকলা অনুষদ জানিয়েছে, পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মোটিফ মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমাদের মনোবল ভাঙতে পারবে না। আমরা আরও জোরালোভাবে বৈশাখ উদযাপন করবো।

ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে এটিকে বাঙালির সাংস্কৃতিক উৎসবের ওপর হামলা হিসেবে দেখছেন। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীর দ্রুত শাস্তির দাবি করেছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে মোটিফে আগুন দেয়ার ঘটনা কেবল একটি অপরাধই নয়, এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মুক্তচিন্তার প্রতীকের ওপর আঘাত। কর্তৃপক্ষের তৎপরতা এবং আসন্ন গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি জনমনে কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে। তবে এ ধরনের ঘটনা রোধে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ ও সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সবার দেশ/এমকেজে