Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২০:০৬, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের পর বিকল্প পথে বাংলাদেশ

সিলেট থেকে সরাসরি স্পেনে পণ্য রফতানি

সিলেট থেকে সরাসরি স্পেনে পণ্য রফতানি
ফাইল ছবি

ভারত কর্তৃক তৃতীয় দেশে বাংলাদেশি পণ্য রফতানির জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পর বাংলাদেশ নতুন পথে এগোচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আগামী ২৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো সরাসরি আন্তর্জাতিক কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে।

সরকারের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের রফতানি খাত, বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্পের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ বিমান জানিয়েছে, প্রথম কার্গো ফ্লাইটটি ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্পেনের উদ্দেশে রওনা হবে। এতে প্রায় ৬০ টন গার্মেন্ট পণ্য পরিবহন করা হবে। ফ্লাইটটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিরাপত্তা ও মানসম্পন্ন পরিবহনের নিয়ম মেনে পরিচালিত হবে। এসএসসি এবং আরথ্রি সার্টিফিকেশনসহ বিমানের প্রশিক্ষিত জনবল এই কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবে। 

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামো ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে এ কার্গো সেবা চালু হচ্ছে। বিমানবন্দরে রফতানি কার্গো কমপ্লেক্সে ওয়ারহাউজ সুবিধা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় পরিসরে ওয়ারহাউজের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে বেসরকারি খাতে কয়েকটি ওয়ারহাউজ নির্মাণ কাজ চলছে, যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। 

তবে, বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিয়মিত কার্গো ফ্লাইটের অনুপস্থিতিতে পুরোপুরি গ্রাউন্ড সেবা সচল রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হবে। বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বাড়াতে এবং গ্রাউন্ড সেবার দক্ষতা উন্নত করতে আরও বিনিয়োগ ও পরিকল্পনার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

উল্লেখ্য, ভারত ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০২০ সালের ২৯ জুনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এ সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ ভারতের স্থল বন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দর ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারসহ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পণ্য রফতানি করতো। 

ভারত তাদের বন্দর ও বিমানবন্দরে পণ্যের ভিড়, লজিস্টিক বিলম্ব এবং নিজেদের রফতানি কার্যক্রমে ব্যাঘাতের কারণ দেখিয়ে এ সুবিধা বন্ধ করেছে। তবে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানিকারকরা এ সিদ্ধান্তের পেছনে ভূ-রাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে বলে মনে করছেন। 

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সিলেট অঞ্চলের কৃষি পণ্য, হস্তশিল্প, এবং গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সভাপতি মনজুর আহমেদ বলেন, কার্গো টার্মিনাল চালু হওয়ায় সিলেটের পণ্য সরাসরি বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে, যা খরচ কমাবে এবং রফতানিকারকদের আগ্রহ বাড়াবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি রুবানা হক মনে করেন, যদিও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে বড় না হলেও, সিলেট ও ঢাকার বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজস্ব রফতানি পথকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সিলেট ও ঢাকার বিমানবন্দরকে রফতানির জন্য আরও কার্যকর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন, আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো ব্যবহার করে রফতানি প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আধুনিক সুবিধা এবং সিলেটের কার্গো সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিলেট থেকে নিয়মিত কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খরচ কমানো, জ্বালানি মূল্যে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেয়া এবং আধুনিক সরঞ্জাম স্থাপন জরুরি। 

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, সিলেটের কার্গো সুবিধা চালু হওয়া আমাদের রফতানি খাতের জন্য বড় সুযোগ। তবে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্যের জন্য আমাদের বিমানবন্দরের সক্ষমতা এবং সেবার মান আরও উন্নত করতে হবে। 

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু বাংলাদেশের রফতানি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। প্রথম ফ্লাইটটি স্পেনে ৬০ টন গার্মেন্ট পণ্য নিয়ে যাত্রা করবে, যা বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা প্রদর্শন করবে। তবে, এ উদ্যোগের পূর্ণ সাফল্য নির্ভর করবে অবকাঠামো উন্নয়ন, খরচ কমানো এবং নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার ওপর। সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সিলেট বিমানবন্দর রফতানির একটি শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। 

সবার দেশ/এমকেজে