Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩০, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

গণতান্ত্রিক সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট ও শুল্ক নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা

ট্রাম্পের ২ উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর  ঢাকা সফর

ট্রাম্পের ২ উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর  ঢাকা সফর
ছবি: সংগৃহীত

আগামী বুধবার (১৬ এপ্রিল) তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এবং অ্যান্ড্রু হেরাপ। তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন মায়ানমারে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসন। 

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রথম উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল হিসেবে এ সফরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, মায়ানমারের পরিস্থিতি, পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, বুধবার প্রথমে ঢাকায় পৌঁছাবেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক। পরে অ্যান্ড্রু হেরাপ, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সুসান স্টিভেনসনের সঙ্গে ঢাকায় আসবেন। 

সফরের প্রথম দিন তারা মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। এরপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) তারা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ অন্তর্বর্তী সরকারের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিকোল চুলিকের সফরে মূল ফোকাস থাকবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এবং এতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা দিতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন। রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে তার বৈঠকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম উচ্চপর্যায়ের সফর। দুই দেশের সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নীতিও উঠে আসতে পারে।

অ্যান্ড্রু হেরাপের সফরে রোহিঙ্গা সংকট এবং মায়ানমারের চলমান পরিস্থিতি প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, এবং এ সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বারবার উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় দাতা হলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে সহায়তার পরিমাণ কমতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। হেরাপ মায়ানমারের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত পাল্টা শুল্ক নীতি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার। সম্প্রতি বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব উঠেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সফরে এ ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার এবং শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কও এ সফরে আলোচনার বিষয় হতে পারে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করতে পারেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম উচ্চপর্যায়ের এ সফর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। গণতান্ত্রিক সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, মায়ানমারের পরিস্থিতি এবং বাণিজ্যিক শুল্কের মতো বিষয়গুলো এ আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ সফরকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখছে। সফরের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করতে পারে।

সবার দেশ/এমকেজে