জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্তের প্রত্যাশা
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা

২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনের সত্য উন্মোচন করতেই হবে। পুরো জাতি তদন্ত কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে।
বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় তদন্ত কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
তদন্ত কমিশনের অগ্রগতি
২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর গঠিত সাত সদস্যের জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান, জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। কমিশন প্রধান বলেন, এটি ১৬ বছর আগের ঘটনা, তাই তথ্য সংগ্রহে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, কারাগারে থাকা কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তিনি জানান, ২৩ জন অভিযুক্ত বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন, যাদের মধ্যে আটজন সাক্ষাৎকারের জন্য যোগাযোগ করেছেন।
পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের প্যাটার্ন
কমিশন প্রধান ফজলুর রহমান জোর দিয়ে বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদকে হত্যার পর বাকিদের হত্যা করা হয়। পরিকল্পনা ছাড়া এমন ঘটনা সম্ভব নয়। তিনি এ হত্যাকাণ্ডকে ‘পলাশীর পুনরাবৃত্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে এর মূল কারণ উদঘাটনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা
কমিশনের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পরও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরানো হয়নি, কাউকে দায়ী করা হয়নি। এটি গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা। তিনি ঘটনার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেন।
সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তদন্ত কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, মসৃণভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কমিশনকে তদন্তে সফল হতেই হবে। তিনি জাতির প্রত্যাশা পূরণে কমিশনের সাফল্যের উপর জোর দেন।
ঘটনার পটভূমি
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। বর্তমানে হত্যা মামলাটি আপিল বিভাগে এবং বিস্ফোরক মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।
চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা
কমিশন জানায়, ঘটনার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে মারা গেছেন বা স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছেন, যা তদন্তে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তবে, কমিশন তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে এবং জনগণকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। তদন্ত কমিশনের কাজ এ ঘটনার প্রকৃত সত্য উন্মোচন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদ এবং কমিশনের প্রতিশ্রুতি জাতির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে একটি নতুন আলো জ্বালাতে পারে।
সবার দেশ/এমকেজে