Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৯:১৮, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

৭১-এ গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বললো ঢাকা

৭১-এ গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বললো ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ দাবির পাশাপাশি বাংলাদেশ ৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা ফেরত এবং আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এ তথ্য জানান। 

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন। এ বৈঠকে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করে। জসীম উদ্দিন জানান, পাকিস্তান এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। পাকিস্তান এ বিষয়ে সাধারণ ক্ষমা চাওয়া নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিলো, যা বিশ্বের অন্যতম নৃশংস অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর নির্মম হামলা শুরু করে। এ গণহত্যায় লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়, এবং অসংখ্য মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। ডিসেম্বরে পাকিস্তানি বাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও এ গণহত্যার ক্ষত বাংলাদেশের জনগণের মনে এখনও রয়ে গেছে।

আর্থিক পাওনা ও আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবর্তন

বৈঠকে বাংলাদেশ ৪.৩২ বিলিয়ন ডলারের পাওনা ফেরতের দাবি জানিয়েছে, যা ১৯৭১ সালের পর থেকে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের বকেয়া রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এছাড়া, বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ পাকিস্তানিরা, যাদের অধিকাংশই বিহারী সম্প্রদায়ের, ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশে অরক্ষিত অবস্থায় বসবাস করছেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর

পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন জানান, আগামী ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসবেন। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি ক্ষমা চাওয়া, আর্থিক পাওনা এবং আটকে পড়া নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আরও আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৈঠকে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যোগাযোগের বিষয়েও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বৈঠকের পর জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনি এ আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করেছেন।

জনমত ও প্রত্যাশা

বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। ঐতিহাসিক এ ক্ষত নিরাময়ে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রকাশকে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে, পাকিস্তান এ বিষয়ে কতটা সাড়া দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ আলোচনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, তবে এর সফলতা নির্ভর করবে পাকিস্তানের আন্তরিকতা ও বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের ওপর। আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও অগ্রগতি প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

সবার দেশ/কেএম