হাসিনাসহ ১২ জনের নামে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারির আবেদন
এদেরকে ধরিয়ে দিন
পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র ইনামুল হক সাগর জানান, আদালতের নির্দেশনা, প্রসিকিউশন অফিসের সুপারিশ ও তদন্তকারী সংস্থার চাহিদার ভিত্তিতে রেড নোটিশের আবেদন করা হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি ইন্টারপোলের প্রক্রিয়াধীন।

গত বছরের রাজনৈতিক পালাবদলের পর দেশ থেকে বিদাড়িত হয়ে ভারতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মাফিয়া হাসিনা। এবার তাকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দেশে ফিরিয়ে আনতে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশের আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (NCB)।
শুধু শেখ হাসিনাই নন—এ তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির আরও ১১ জন নেতা ও একজন সাবেক পুলিশপ্রধান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ইন্টারপোলে মোট তিন দফায় পাঠানো আবেদনগুলোতে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাছান মাহমুদ, আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, নসরুল হামিদ, শেখ ফজলে নূর তাপস, তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিন দফায় আবেদন
পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র ইনামুল হক সাগর জানান, আদালতের নির্দেশনা, প্রসিকিউশন অফিসের সুপারিশ ও তদন্তকারী সংস্থার চাহিদার ভিত্তিতে রেড নোটিশের আবেদন করা হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি ইন্টারপোলের প্রক্রিয়াধীন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির প্রাথমিক আবেদনটি পাঠানো হয়। এরপর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আবেদন যায়। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল, বাকি ১০ জনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় আবেদন পাঠায় এনসিবি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সম্পৃক্ততা
এ আবেদনের পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের দফতর। তাদের তরফে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ, প্রমাণ ও আইনি যুক্তিসহ সুপারিশ পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকেই প্রক্রিয়াটি আইনানুগভাবে পুলিশের মাধ্যমে ইন্টারপোলে গড়ায়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও প্রত্যর্পণের জটিলতা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। এরপর তিনি ভারত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এখনও তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধও করা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনীতির কারণে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সহজ নয়। একটি দেশের রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে শুধু আইনি প্রক্রিয়াই নয়, প্রয়োজন হয় কূটনৈতিক চাপ, প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক বিধিমালার সুনির্দিষ্টতা।
বেনজীরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থপাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক মামলা। দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগে তার বিরুদ্ধেও ইন্টারপোলকে রেড নোটিশের আবেদন পাঠানো হয়।
সামনে কী?
বর্তমান সরকার রেড নোটিশ জারি ছাড়াও যেসব দেশের সঙ্গে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে—বিশেষ করে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে পৃথক চ্যানেলে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রত্যর্পণের এ প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘসূত্রতাপূর্ণ।
আইনি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইন্টারপোল রেড নোটিশ মঞ্জুর করলেও প্রত্যর্পণ নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অভ্যন্তরীণ আইনের ওপর। এ ধরনের হাই-প্রোফাইল প্রত্যর্পণ বহুবার আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। এটা কেবল আইন প্রয়োগ নয়—বরং পরিবর্তিত ক্ষমতার কাঠামো, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং দেশের বিচারিক ব্যবস্থার নতুন বাস্তবতায় এক পরীক্ষামূলক অধ্যায়।
সবার দেশ/কেএম