Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

আওয়ামী লীগের মিছিল বন্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর নির্দেশ

আওয়ামী লীগের মিছিল বন্ধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর নির্দেশ
ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগের মিছিল ও সভা-সমাবেশ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। 

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ নির্দেশনার কথা জানান। 

পটভূমি ও নির্দেশনার বিস্তারিত

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলটি রাজনৈতিকভাবে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যতে যেনো আওয়ামী লীগ আর কোনো মিছিল বা সমাবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পুলিশ যদি এসব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুক্রবার উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের প্রেক্ষিতে জনগণের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এছাড়া, আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এ নির্দেশনা এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে।

থানা পরিদর্শন ও পুলিশের প্রস্তুতি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শনিবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন বিমানবন্দর থানা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি থানার বিভিন্ন কক্ষ, ক্যানটিন এবং পুলিশ সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ঠিক না থাকলে তাদের কাছ থেকে কার্যকর কাজ আদায় করা সম্ভব নয়। আমরা তাদের কর্মপরিবেশ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের দিকে নজর দিচ্ছি।

এছাড়া, তিনি উত্তরা পশ্চিম, তুরাগ এবং উত্তরা পূর্ব থানাও পরিদর্শন করেন। এসব পরিদর্শনের উদ্দেশ্য ছিলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জোরদার করা এবং পুলিশের প্রস্তুতি যাচাই করা। তিনি জানান, পুলিশ সদস্যদের পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে পারিবারিক সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে, যাতে তারা মানসিকভাবে স্বস্তিতে থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারে।

জনমত ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক মিছিলের প্রতিক্রিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একটি পোস্টে বলা হয়, আওয়ামী লীগ কি বাংলাদেশের কোনো আইন দ্বারা নিষিদ্ধ? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মিছিল করা কি অপরাধ? এ পোস্টে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনার আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্যান্য গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারা দাবি করছে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গণহত্যার জন্য দায়ী, এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত। আওয়ামী লীগ কোও রানৈতিক দল নয়, টি একটি জঙ্গি ফ্যাসিবাদী সংগঠন।

সরকারের অবস্থান

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক বিবৃতিতে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী দল। বাংলাদেশে তাদের প্রতিবাদ বা মিছিল করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এ ধরনের কর্মসূচির চেষ্টা করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে।

পুলিশের ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশনার পর পুলিশ ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। শুক্রবারের মিছিলের ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তবে, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও উঠেছে। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, আমরা পুলিশের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আতিকুর রহমান মিলনের নেতৃত্বে শুক্রবার বিমানবন্দর এলাকায় একটি সংক্ষিপ্ত মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যা পাঁচ মিনিট স্থায়ী ছিলো।

আওয়ামী লীগ ইস্যুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর চাপ বাড়ছে, কারণ তাদের এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা পরীক্ষা করা হবে।

সবার দেশ/কেএম