আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে ইতিহাসসেরা: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোত্তম নির্বাচন হবে এবং এটি দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে, যা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রধান উপদেষ্টা এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এএনএফআরইএল হলো এশিয়ার একটি নাগরিক সংগঠন, যারা গত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে কাজ করে আসছে।
প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ
এএনএফআরইএল-এর প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই। সাক্ষাতে তারা বাংলাদেশে তাদের চলমান কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং স্বাধীন ও নাগরিক-চালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রতিনিধিদল জানায়, তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং এবং প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা বাংলাদেশে সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করতে সহায়ক হবে। তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
নির্বাচনী সংস্কার ও প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা একটি এমন নির্বাচনের আয়োজন করতে চাই, যা শুধু দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করবে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার চলমান রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশে গণতান্ত্রিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
জনমত ও প্রত্যাশা
প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একটি এক্স পোস্টে বলা হয়, ইউনূস স্যারের প্রতিশ্রুতি আশাব্যঞ্জক। তবে, নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতার ওপর। আরেকটি পোস্টে বলা হয়, ইতিহাসের সেরা নির্বাচনের জন্য শুধু কথা নয়, দৃঢ় পদক্ষেপ দরকার।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, এএনএফআরইএল-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পৃক্ততা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে, তারা এও জানিয়েছেন, স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক সম্পৃক্ততা এবং নির্বাচনী সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা। আগামী নির্বাচনের জন্য সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এছাড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং নির্বাচনী আইন সংস্কারের কাজও চলছে।
এএনএফআরইএল-এর মতো সংস্থার সম্পৃক্ততা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, স্থানীয় রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক দিক নির্দেশ করছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন যদি সত্যিই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তবে তা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। তবে, এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সবার দেশ/কেএম