জুলকারনাইন সায়েরের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!
‘র’ স্টেশন চিফ কী ঢাকায়?

বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর তৎপরতা নিয়ে আবারও উত্তাল রাজনীতির ময়দান। প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের সদ্য এক ফেসবুক পোস্ট ঘিরে এই বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিস্ফোরক পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, ভারতের ‘র’ সংস্থার স্টেশন হেড রাজেশ কুমার অগ্নিহোত্রী এখনো ঢাকায় সক্রিয় রয়েছেন—এমনকি ভারতীয় হাইকমিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরের কভার ব্যবহার করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর নাক গলাচ্ছেন!
তার এ পোস্ট ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং কূটনৈতিক মহল।
ফ্যাসিস্ট শাসনের ছায়া এখনো রয়ে গেছে
সায়েরের ভাষ্য অনুযায়ী, অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরও রাজেশ কুমার অগ্নিহোত্রী ঢাকায় রয়েছেন এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর স্টেশন চিফ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের এ বিশেষ বাহিনী ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর নেপথ্য ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি আরও বলেন, এ বাহিনীটি শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যবাদের হাতিয়ার। আর ঢাকায় বসেই তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে, প্রেসক্রিপশন দেয়—যা সম্পূর্ণরূপে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।
এনসিপি নেতার সরব অবস্থান
সম্প্রতি এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর এক বক্তব্যও দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘র-এর স্টেশন হেডের সঙ্গে মিটিং করে তার প্রেসক্রিপশন নিয়ে রাজনীতি হবে না।’ এ বক্তব্যের পরপরই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে—ঢাকায় এখনো কি ‘র’-এর স্টেশন হেড সক্রিয়? সে জল্পনায় ঘি ঢাললেন জুলকারনাইন সায়ের, যিনি বহুদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে অনুসন্ধান করে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান
জুলকারনাইন সায়ের বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এ ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক নীতিমালার পরিপন্থী। রাজেশ কুমার অগ্নিহোত্রীকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
অতীতেও সতর্ক করেছিলেন
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারিও একই ব্যক্তিকে নিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন সায়ের, যেখানে তিনি রাজেশের কার্যক্রম ও তার রাজনৈতিক সংযোগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। সব মিলিয়ে, এ ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশ কি সত্যিই ভারতীয় গোয়েন্দা প্রভাব থেকে মুক্ত? নাকি শুধু দৃশ্যপট বদলেছে, কিন্তু ছায়া শাসনের থাবা এখনো বর্তমান?
সায়ারের এ পোস্ট ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আবারও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে তদন্ত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের দাবি উঠছে।
বিশ্লেষণঃ ‘র’ এর ভূমিকায় উদ্বেগ
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বরাবরই সক্রিয় ছিলো। শ্রীলঙ্কা থেকে মালদ্বীপ, এমনকি নেপালেও ‘র’-এর ছায়া দেখা গেছে। বাংলাদেশে ‘র’ এর স্টেশন হেড পরিচয়ে কেউ এত দীর্ঘ সময় ধরে থেকে গেলে, সেটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বড় উদ্বেগের বিষয়।
প্রতিক্রিয়া অনুপস্থিত, নীরব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
জুলকারনাইনের চাঞ্চল্যকর পোস্ট নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বিষয়টি নজরে এসেছে এবং পররাষ্ট্র দফতরের গোয়েন্দা শাখা বিষয়টি যাচাই করে দেখছে।
গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের জনগণের প্রত্যাশা ছিল ভারতীয় হস্তক্ষেপ ও গোয়েন্দা নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তির। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্যপ্রবাহ দেখাচ্ছে, ‘র’ এখনো নেপথ্য থেকে সক্রিয়। এ যেন বিজিত এক শাসকের প্রেতছায়া—যার হাত থেকে মুক্তি এখনো পুরোপুরি আসেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কূটনৈতিক মর্যাদা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে এ অভিযোগ নিছক ফেসবুক পোস্টে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। রাষ্ট্র কি এবার সাহসী সিদ্ধান্ত নেবে?
সবার দেশ/কেএম