Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫০, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১২:৫১, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

বাবার নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স ইস্যু 

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ক্ষমা প্রার্থনা

অনেকে এটাও বলছেন, উপদেষ্টা বা তার আত্মীয়দের বৈধ জীবিকা নির্বাহের অধিকার নিশ্চয়ই আছে। তবে সেটা কোনও অবৈধ পথে হয়েছে কিনা কিংবা সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে কি-না সেটা নিশ্চিত না হয়ে এভাবে সংবাদ পরিবেশন কোন সুস্থ সাংবাদিকতার কাম্য হতে পারে না।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ক্ষমা প্রার্থনা
ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার বাবা বিল্লাল হোসেনের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স ইস্যুর ঘটনাকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল, ২০২৫) সকালে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

ঘটনার সূত্রপাত

বুধবার (২৩ এপ্রিল, ২০২৫) রাত ৯টার দিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেন যে, আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), কুমিল্লার একটি প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, লাইসেন্সটি ১৬ মার্চ, ২০২৫-এ তালিকাভুক্ত করা হয়। এ দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।

জুলকারনাইন জানান, তিনি আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উপদেষ্টা প্রথমে বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং যাচাইয়ের জন্য সময় চান। পরে আসিফ নিশ্চিত করেন যে, লাইসেন্সটি সত্য, তবে এটি তার জ্ঞাতসারে করা হয়নি।

আসিফ মাহমুদের ব্যাখ্যা

আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, তিনি সাংবাদিকের ফোন পাওয়ার পর বাবার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে, লাইসেন্সটি জেলা পর্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর থেকে ইস্যু করা হয়েছে। তার বাবা বিল্লাল হোসেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং বর্তমানে আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। স্থানীয় এক ঠিকাদারের অনুরোধে এবং তাকে সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যে বাবার পরিচয় ব্যবহার করে লাইসেন্স ইস্যুর পরামর্শ দেয়া হয়। এ পরামর্শ মেনে বিল্লাল হোসেন লাইসেন্সটি গ্রহণ করেন।

আসিফ স্বীকার করেন যে, একজন মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তির নিকট আত্মীয় হিসেবে তার বাবার এ লাইসেন্স গ্রহণ স্বার্থের দ্বন্দ্ব (Conflict of Interest) সৃষ্টি করে, যা নৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘বাবা সম্ভবত স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি পুরোপুরি বুঝতে পারেননি।’ এরপর তিনি বাবাকে বিষয়টি বোঝান, এবং বিল্লাল হোসেন তাৎক্ষণিকভাবে লাইসেন্স বাতিলের জন্য আবেদন করেন, যা ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।

আসিফ আরও জানান, এ লাইসেন্সের মাধ্যমে কোনো ঠিকাদারি কাজের জন্য এখনও কোনো আবেদন জমা দেয়া হয়নি, এবং বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে একটি ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ ছিলো। তিনি তার বাবার পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন, আমি সবসময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পক্ষে। এ ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া

বুধবার রাত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন যে, আসিফ মাহমুদের পদের প্রভাবে তার বাবা অবৈধভাবে লাইসেন্স পেয়েছেন। কেউ কেউ এটিকে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে সমালোচনা করেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি পোস্টে বলা হয়, ‘ছেলে এখন উপদেষ্টা, টাকা কামানোর নেই মানা,’ যা জনমনে এ ঘটনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে।

অন্যদিকে, আসিফ মাহমুদের ক্ষমা প্রকাশ এবং লাইসেন্স বাতিলের দ্রুত পদক্ষেপকে কেউ কেউ ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তারা মনে করেন, এটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একটি উদাহরণ। তবে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এ ধরনের লাইসেন্স এত দ্রুত ইস্যু হওয়ার পেছনে প্রশাসনিক দুর্বলতা বা প্রভাবের ভূমিকা ছিলো কিনা।

আরও পড়ুন <<>> উপদেষ্টা আসিফের বাবার ‘ঠিকাদারি লাইসেন্স’ 

আবার অনেকে এটাও বলছেন, উপদেষ্টা বা তার আত্মীয়দের বৈধ জীবিকা নির্বাহের অধিকার নিশ্চয়ই আছে। তবে সেটা কোনও অবৈধ পথে হয়েছে কিনা কিংবা সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে কি-না সেটা নিশ্চিত না হয়ে এভাবে সংবাদ পরিবেশন কোন সুস্থ সাংবাদিকতার কাম্য হতে পারে না।

প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

আসিফ মাহমুদ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবার নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স ইস্যুর ঘটনা সরকারি পদে থাকা ব্যক্তিদের নিকট আত্মীয়দের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে। এ ঘটনা সরকারি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং জনগণের আস্থা বজায় রাখার বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আসিফ মাহমুদের দ্রুত পদক্ষেপ এবং ক্ষমা প্রকাশ জনসমালোচনা কিছুটা কমাতে পারলেও, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর নীতি ও তদারকির প্রয়োজন। এছাড়া, এলজিইডির মতো প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স ইস্যুর প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবিও উঠেছে।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এ ক্ষমা প্রকাশ এবং লাইসেন্স বাতিলের পদক্ষেপ সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্থাপিত অভিযোগের দ্রুত সমাধানের চেষ্টা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে এ ঘটনা সরকারি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পারিবারিক সদস্যদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। জনগণ এখন সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রশাসনিক সংস্কারের দিকে নজর রাখবে।

সবার দেশ/কেএম