Advertisement

সবার দেশ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১১:৩৬, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

লেখক, প্রকাশক ও বাংলা একাডেমির সদস্যদের দাবি উপেক্ষিত

ফ্যাসিস্টদের হাতেই বইমেলা!

‘একুশে বইমেলা ২০২৫’এর পরিচালনা কামিটিতে প্রথা ভেংগে বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, বৈষম্য বিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ও জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ-এর প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে মনগড়া প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন দিচ্ছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

ফ্যাসিস্টদের হাতেই বইমেলা!
ফাইল ছবি

ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলেও বর্তমানে ফ্যাসিস্টদের নিয়ন্ত্রণে অমর একুশে বইমেলা। অন্যদিকে বাংলা একাডেমিতে এখনও ফ্যাসিস্টরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাংলা একাডেমি ও বইমেলা ফ্যাসিস্টমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে প্রকাশকদের বিভিন্ন সংগঠন ও বাংলা একাডেমির সাধারণ সভায় ফেলো, জীবন সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা।

কিন্তু এ নিয়ে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপপরিচালক পদেও তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছিলো, যা এখন একাডেমির গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে।  

আইন, নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো আচরণ করে যাচ্ছেন। জানা যায়, ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’এর পরিচালনা কামিটিতে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও প্রথা ভেংগে বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, বৈষম্য বিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ও জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ-এর প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে মনগড়া প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মনোনয়ন দিচ্ছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে বলা হলেও-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

এবারের বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব একটি অভিজ্ঞতা না থাকা প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অথচ গত কবছর ইভেন্ট হিসাবে যারা এ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে আসছিলো তাদের পূর্বেই আকার-ইঙ্গিতে বারণ করা হয়েছে অংশ না নিতে। কর্মচারীদের কাছ থেকে জানা যায়, বিভিন্ন অসংগতির কারনে পূর্ববর্তী মহাপরিচালক এ আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রেখেছিলো। কেন পুনরায় আবার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে যেতে হলো এর সদুত্তর দায়িত্বে নিয়োজিত কেউই দিতে পারেননি। অনেককে প্রশ্ন করা হলে সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। সবাই মহাপরিচালকের সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন।

যে বৈষম্য ও বঞ্চিতের স্রোতোধারায় ফ্যাসিস্টকে বিদায় করে মননের প্রতীক বাংলা একাডেমিকে নতুন আঙ্গিকে গড়ার সুযোগ ছিল-তার সিংহভাগ দখল করে বসে আছেন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, তাদের তল্পিবাহক, খোলস পরিবর্তনকারী, ইসকন সদস্য এবং দুর্নীতিবাজরা। বিগত ক'বছরের অবলোকন ও অভিজ্ঞতার আলোকে একাধিক পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের সাথে কথা বলে জানা যায়-যে ত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টকে উৎখাত করা হয়েছিলো তার লেশমাত্র কোনো পরিবর্তন হয়নি বর্তমান একাডেমিতে। দীর্ঘদিন প্রশাসনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সরিয়ে আশা করা হয়েছিলো হয়তো একাডেমি নতুন আঙ্গিকে জাতীয়তাবাদী শক্তিতে এগিয়ে যাবে; কিন্তু পূর্বের ধারাবাহিকতায়  বর্তমানে যা হচ্ছে তার সবকিছুতেই ফ্যাসিস্টদের চক্রান্ত ও উপস্থিতি সর্বমহলে নিন্দার ঝড় তুলেছে।

অমর একুশে বইমেলা আসন্ন। বইমেলা পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। একাডেমির পরিচালক ড. সরকার আমিনকে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। ফ্যাসিস্টদের দোসর ও কবি কামাল চৌধূরী ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত সরকার আমিনকে সদস্য সচিব করায় নানা মহলে প্রতিবাদ করা হয়। প্রকাশকরা সম্প্রতি বাংলা একাডেমিতে প্রতীকী অনশন পালনের মাধ্যমে সরকার আমিনের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে। অপরদিকে বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৭তম সাধারণ সভায়ও  সরকার আমিনের পদত্যাগসহ একাডেমিকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করার দাবি করেন সদস্যরা। এরপরও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানে গেলে তারাও সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের সাথে আলোচনায় জানা যায়, সরকার আমীন নিখুদ পরিকল্পনায় ও আওয়ামী দাপটে ৩০/৪০ জন লেখকদের দিয়ে পর্যায়ক্রমে বিগত ১৭ বছরে তার সম্পাদিত পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’ প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী ধ্যান ধারণার বাইরে কেউই গত ১৭ বছর একাডেমির এ অংশে প্রবেশ করতে পারেনি।

নতুন আঙ্গিকে জাতীয়তাবাদী শক্তিতে একাডেমি গোছানো যখন সময়ের দাবি, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শক্তি যখন ৩১ ডিসেম্বর-২০২৪ মুজিববাদী সংবিধান রহিত করে আওয়ামী লীগের কবর রচনায় ব্যস্ত, তখন রাষ্ট্রীয় এ অনুষ্ঠানের নেপথ্যে ফ্যাসিস্টদের পরিকল্পনা ও অংশীজন কিভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে-তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব মহলেই আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার অনিয়ম করে উপপরিচালক পদেও তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছিলো। এরা হলেন ড. তপন কুমার বাগচী, ড. আমিনুর রহমান সুলতান ও ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন নিপু। এর তিনজনই বাংলা একাডেমিতে চাকরি নেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ ও স্বীয় স্বার্থে সব সময় দাপিয়ে  বেড়িয়েছেন, এখন তারা বীরদর্পে অফিসে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন।

ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন নিপু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রথমে বাংলা একাডেমিতে সহপরিচালক (চুক্তিভিত্তিক) ও পরে অবৈধভাবে জোরপূর্বক সরাসরি উপপরিচালক পদে নিয়োগ দানে বাধ্য করেন, যা বাংলা একাডেমির প্রবিধানমালার পরিপস্থী। ড. তপন কুমার বাগচী বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ড. আমিনুর রহমান সুলতান দলের প্রভাব বিস্তার করে প্রকল্প ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, একাডেমির বৈষম্য ও বঞ্চিত হওয়া ধোঁয়াতুলে বর্তমানে আওয়ামী সমর্থক, সুবিধাবাদি ফ্যাসিষ্টরা প্রশাসনের সর্বস্তরে দায়িত্ব পালন করছে। নতুন মহাপরিচালক যোগদানের পর প্রথমেই ফ্যাসীবাদ পুষ্ট পরিচালক সমীর কুমার সরকারকে প্রশাসনে বদলি করেন আওয়ামী পন্থীরা। বঙ্গবন্ধু নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের লেখক উপপরিচালক ইমরুল ইউসুফকেও প্রশাসনে বদলি করা হয়। এনিয়ে বিভিন্ন  পর্যায়ে ক্ষোভ পরিলক্ষিত হয়।

সবার দেশ/কেএম