ছয় দফা না হয় মৃত্যু
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের টানা শাটডাউন কর্মসূচি

সারা দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে টানা শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে এবং ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
গতকাল সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছয় দফা দাবি পূরণের লক্ষ্যে রূপরেখা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত ২৯ এপ্রিল থেকে সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একযোগে শাটডাউন কর্মসূচি পালিত হবে। ছয় দফা না হয় মৃত্যু।
আন্দোলনের পটভূমি
দীর্ঘদিন ধরে ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছেন দেশের ৪ লাখের বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতিতে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলসহ অন্যান্য বিষয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা কঠোর পদক্ষেপে যান। গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা। একই দিন সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। কুমিল্লায় এ অবরোধের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন, যা আন্দোলনকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
১৭ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা সারা দেশে রেলপথ ব্লক কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আশ্বাস দেয়ার পর তারা কর্মসূচি শিথিল করে আলোচনায় বসেন। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ১৮ এপ্রিল তারা কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ করেন।
আলোচনা ও স্থগিত-প্রত্যাহার
২২ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইডিইবি ভবনে এক সভা হয়। সভায় শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে আইডিইবি ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের আশ্বাস দেয়া হয়। এরপর সেদিন রাতে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেয় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৩ এপ্রিল স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাহার করে তারা আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা জানান, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা কোনও ফল দেয়নি।
সরকারের অবস্থান ও সমালোচনা
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে দফায় দফায় কর্মসূচি এবং স্থগিতের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার আন্দোলনে ফেরার পেছনে কিছু কর্মকর্তা উস্কানির আশঙ্কা করছেন। তারা মনে করেন, আন্দোলনের এ ধারাবাহিকতার পেছনে বাহ্যিক প্রভাব থাকতে পারে, যা তদন্ত করে দেখা দরকার।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিনের অবহেলা ও প্রশাসনিক জটিলতার একটি প্রতিফলন। ছয় দফা দাবি পূরণে সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও বাস্তব পদক্ষেপের অভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়েছে। আন্দোলনের তীব্রতা এবং শাটডাউন কর্মসূচি শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো, নতুবা পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সবার দেশ/কেএম