Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ২২:১০, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

এই দল আর সেই দল সব দল-ই তো একদল

এই দল আর সেই দল সব দল-ই তো একদল
ছবি: সবার দেশ

‘বিএনপিকে আওয়ামী শিবিরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে’ বিএনপি মহাসচিবের এ কথা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতার কথা, অবশ্যই সবার ভেবে দেখা উচিত। 

প্রশ্ন হলো তিনি কেনো এ কথা বললেন এবং যারা ঠেলে দিচ্ছে ওই শিবিরে, এর সত্যতাই বা কতটুকু? এ সত্যতা অনুধাবন করে তিনি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তার দলের জন্য, সেটাও জাতির জন্য  ভাবনার বিষয়।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাজনীতি করেন দেশ বা জনতার কল্যাণের জন্য। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তারা তো রাষ্ট্রের সম্পদকে সুষম বণ্টনের মাধ্যমে আপামর জনসাধারণ কে শান্তি, সুখ ও স্বাচ্ছন্দ এনে দেয়ার লক্ষ্যেই রাজনীতি করে থাকেন। তাহলে জনকল্যাণের জন্য রাজনীতি, জনগণের জন্য রাজনীতি একটি জাতির জন্য অত্যন্ত উপকারী। যদিও বিগত যুগের পর যুগ এই দেশে আমরা দেখে আসছি যে, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশের ও সাধারণ জনতার চেয়ে নিজের বা তার দলীয় লোকজনের উন্নয়নের দিকেই মনোনিবেশ করেছে বেশি। সাধারণ জনতার উপর করারোপ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগরে জমা হওয়া সেই টাকা তারা নিজেরাই  লুণ্ঠন করেছেন । সম্প্রতি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন একটি রাজনৈতিক দল সদলবলে। 

এজন্যই এ দেশের সাধারণ জনতা ঐ গোষ্ঠীর প্রতি  বিরাগ ভাজন হয়ে পরবর্তীতে তাদেরকে দেশ থেকে তাড়াতে ঐক্যবদ্ধ হয়। যা সম্প্রতি আমরা দেখেছি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে একটি স্বৈরাচারী সরকার অবশেষে কিভাবে সদলবল বিদায় নিয়েছে, পালিয়ে গেছে । 

বিগত পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সবাই পালালো, কেনো? তারা জনগণের প্রতি এবং জাতির সাথে এতটাই অন্যায় আচরণ, শোষণ, টাকা লুণ্ঠন, অন্যায় এবং অন্যায্য উপায়ে সম্পদ কুক্ষিগত করেছিলেন যার জন্য তাদেরকে জনতার রোষানলে পড়ে দেশ থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হতে হয়েছিলো।
 
বিএনপি মহাসচিব এর কথার এখানেই উত্তর আছে। যদি বর্তমানে এবং আগামী দিনে এ ধরনের কাজ তাদের দ্বারাও সংঘটিত হবে বলে সাধারণ জনতার আশঙ্কা হয়, তবেই তারা তাদেরকে ঐ শিবিরে ঠেলে পাঠাবে, যা জনতার জন্য অন্যায় নয়। 

এখন বিএনপির করণীয় কি? বিএনপির অবশ্য করণীয় হচ্ছে, জনতা যাতে এ ধরনের কথা চিন্তা না করতে সুযোগ পায় এবং তাদেরকে জনগণ থেকে আলাদা করে না ভাবে, সেদিকে তারা মনোনিবেশ করবেন এবং জনতা যে ধরনের কাজগুলো পছন্দ করে সে কাজগুলো তারা করবেন। সম্প্রতি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এবং বিভিন্ন সংস্কারের আলাপে দেখা যাচ্ছে বিএনপি একটু আলাদা আলাদা ধরনের আচরণ করছে ছাত্র-জনতার চাহিদা এবং সরকারের কার্যক্রমের প্রতি। 

‘কথায় আছে চুন খেয়ে মুখ পূড়লে দই দেখলে ডর লাগে’। সে কারণেই ছাত্র জনতা এবং কোন কোন ছাত্র উপদেষ্টার কন্ঠে বিএনপির কথার প্রতি একটু বিপরীত ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাধারণ জনতার থেকে এই ধরনের কথা রাস্তায়, বাসে, মাঠেঘাটে আলোচনা শুনা যাচ্ছে। সাধারণ জনতা দেখছে স্বৈরাচারী সরকার চলে যাওয়ার পরও চাঁদাবাজির শুধু হাত বদল হয়েছে চাঁদাবাজি ঠিকই চলছে। এছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও ছাত্র জনতা এবং বিএনপি'র মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টি প্রতিয়মান হচ্ছে যে,  এই দল আর সেই দল, সব দলই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ, আসলে একই দল।

আরও পড়ুন <<>> কর্তব্যকর্মে অবহেলা, দায় কার?

এখন এ আলোচনা লিখতে গেলে হাজার হাজার শব্দ, বাক্য চলে আসবে তাতে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটতে পারে। পাঠক ঠিকই অনুধাবন করতে পারছেন যে, আসলে ঘটনা কি ঘটছে। সেজন্য বিএনপি মহাসচিবের উচিত ভালো করে খবর সংগ্রহ করা যে, জনতার কাতার থেকে সত্যিই এরকম হচ্ছে কিনা। সঙ্গত কারণে যদি জনতা তাদেরকে আওয়ামী শিবিরে ঠেলে দেয়, তাহলে জনতার কল্যাণের জন্য জনতার মতের মতো করেই তাদের ভাবতে হবে এবং তাদের কাজকর্ম সেরুপভাবে করতে হবে। আর যদি এতে কোন মিথ্যাচার বা প্রোপাগান্ডা থাকে, তাহলে জনতা কে বোঝাতে হবে যে, তারা সে দলের মতো কোনো আচরণ করতে চাযননা, চাইবেনও না, জাতির অসন্তুষ্টির  কোন কাজ তারা করবেন না। 

সম্প্রতিক সময়ে বিএনপির তরফ থেকে যে ৩১ দফা দাবি  এবং তাদের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি যে সমস্ত কথা বলেন তা অত্যন্ত প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। তাহলে জনতাকে তাদের কথা এবং কর্মের মাধ্যমে বোঝানো উচিত ছাত্র-জনতার মানসিকতা তাদের চিন্তা চেতনার সাথে অসংগতিপূর্ণ নয়। যদিও ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা হয়। বিভিন্ন দলের মতের ভিন্নতা হতেই পারে। সেজন্যই ভিন্নদল গঠন হয়েছে। বিভিন্ন দলের আদর্শও ভিন্ন ভিন্ন রকম থাকতে পারে। যদিও স্বৈরাচারী সরকারকে পতনের লক্ষ্যে ৫  আগস্ট বাংলাদেশের সকল দল ও মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো এবং দেশ স্বৈরাচারের কবল হতে মুক্ত হয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছিরো। এ দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য এখনো তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা একান্ত প্রয়োজন। 

এছাড়াও কোন দলের আচরণে যদি দেখা যায় যে তাদের আচরণও ফ্যাসিস্ট এর মতো, তাহলে যে কোন মূল্যে তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে যে , তারা কখনোই স্বৈরাচারী হবেন না, কারণ এ জাতি কোন স্বৈরাচারীকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: