Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

তরুন-প্রবীনের ইচ্ছাকে সমন্বয়ের মধ্যেই শান্তি নিহিত

তরুন-প্রবীনের ইচ্ছাকে সমন্বয়ের মধ্যেই শান্তি নিহিত

এ সময়ে দেশের প্রধানতম দল হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। বিগত ১৬ টি বছর তারা স্বৈরাচারী সরকারের অনেক জ্বালাতন, শোষণ, শাসন, নিপীড়ন সহ্য করেছে । তাদের অসংখ্য নেতা কর্মীরা জেল খেটেছে, বিভিন্ন গায়েবী মামলার বদৌলতে তারা নিজেদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনি। সব সময় তাদের নেতা কর্মীদেরকে ভয়ে ভয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে।

এক কথায় অস্বাভাবিক কষ্ট যন্ত্রণায় তাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত। ১৬ বছরের এ দীর্ঘ আন্দোলন করে তারা সবাই মিলেও বিগত স্বৈরাচারী সরকারের একটি চুলও নড়াতে পারেনি।  কোটা আন্দোলন যখন এক দফা দাবিতে রূপান্তরিত হয়। বীর ছাত্র-জনতা তাদের জীবন বাজি রেখে রাজপথে নামে। প্রায় দুই হাজার ছাত্র জনতার শহীদ, ৩০ হাজারের অধিক ছাত্র জনতার অন্ধত্ব, পঙ্গুত্ব বরণ এবং এখনো অনেকেই শরীরে অসংখ্য ছররাগুলি নিয়ে হাসপাতালে যন্ত্রণা বিদ্ধ অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে। ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ ভাবে জীবনের মায়া ত্যাগ করে চরম আন্দোলন করে অবশেষে ৫ আগস্ট আমাদেরকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিয়েছে।

এখন আবার আমরা অনেকেই সে আন্দোলনের কৃতিত্ব নিজেদের করে পেতে চাচ্ছি। কিন্তু ইতিহাস এবং বাংলাদেশের সকলেই জানে সত্যিকারের বীর কারা। কাদের আত্মাহুতির বদৌলতে দেশ আজ  মহালুন্ঠনকারী স্বৈরাচারমুক্ত। কাদের ত্যাগের বিনিময়েই বা বর্তমানে বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীরা জেল থেকে বের হয়ে স্বাধীন জীবন যাপন করছে। স্বাধীনতার ঢেকুর তুলে আর দলে দলে অন্তঃকোন্দল করে এ স্বাধীনতা ধরে রাখা যাবে না। ক্রান্তিকাল কিন্তু এখনো কাটেনি। 

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত দল বিএনপি এটা অনস্বীকার্য। দলে চেয়ারপার্সন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীরাও রেহাই পায়নি এ নির্যাতন থেকে। শারিরীক, আর্থিক, মানসিক সবদিক থেকেই তারা নিষ্পেষিত। কিন্তু তারা আন্দোলনে একটা ব্রেকথ্রু আনতে পারছিলোনা। ছাত্ররাই স্ট্রাইকারের ভূমিকা পালন করে আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে। তখন বিএনপি, জামায়াত সহ সমাজের সর্বস্তরের জনগন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ এবং বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তার দোসরেরা সে-দেশে, এদেশে বসে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রের জাল বুনে যাচ্ছে । এছাড়াও আমাদের দেশে তাদের কর্মী বাহিনী বিভিন্ন গুজব রটিয়ে বর্তমান সরকারকে সর্বদা ব্যতিব্যস্ত রাখছে। কিভাবে সরকারকে ব্যর্থ করা যায় সে লক্ষ্যে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ঠিকই কাজ করছে। ইতোমধ্যে অনেক রঙের কার্ড তারা খেলেছে কিন্তু কোনটিতেই জয়লাভ করতে পারেনি। বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনদিনও তারা জয় লাভ করতে পারবে না। দিনশেষে সাধারণ জনগনই কিন্তু সব খেলার তুরুপের টেক্কা। 

আরও পড়ুন: এই দল আর সেই দল সব দল-ই তো একদল

কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা কিন্তু বসে নেই। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইকোপ্যাথ কিলার আসাদুজ্জামান কামাল বালাদেশে আওয়ামীরীগকে পুনর্বাসন করতে ভারতকে হস্তক্ষেপের আহবান করেছেন। তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে একের পর এক খেলা খেলেই চলছে। 

ছাত্র জনতার একটি সবচেয়ে বড় ভুল ছিল বর্তমান সংবিধানের আলোকে তারা শপথ নিয়েছে । তারা যদি আন্দোলনে বিজয় লাভ করার পরপরই বিপ্লবী সরকার গঠন করে ফেলতো, তাহলে হয়তো বর্তমান টালমাটাল পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না ‌। সে দুর্বলতাকে পুঁজি করে পতিত স্বৈরাচারের দোসরেরা যারা ছদ্মবেশে এখনও আছে আমাদের মাতৃভূমিতে, তারা বিভিন্ন কূট চাল চেলে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চাচ্ছে। 

বিপরীতে বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় ছাত্র-জনতা  যারা চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি এবং বাজে কাজের বিরুদ্ধে, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটিকে চাঁদাবাজিতে দায়ী ভাবছে তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের জন্য। বাস্তবতাও কিছুটা তাই। কেননা সারা বাংলাদেশে তাদের কর্মী বাহিনী আছে এবং তাদের শক্তি এ মুহূর্তে অন্য সকল দলের চেয়ে বেশি। দলের হাইকমান্ড থেকে কঠোর নির্দেশ থাকার পরও তৃনমূলে সে বার্তা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশের মানুষের স্বভাবের বহুমুখী আচরণের জন্য অনেক সময় বোঝাই যায়না যে, আসলে কে কখন কোন দল করে। বিপদে পড়লেই বাঙালি নিজের বুলি পাল্টিয়ে নতুন বুলি আওরায়। এটি আমাদের রক্তের একটি বড় সমস্যা । সম্প্রতি বড় রাজনৈতিক দলের সাথে অন্যান্য ইসলামপন্থী দল এবং ছাত্র-জনতার মতের একটু অনৈক্য দেখা যাচ্ছে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দিচ্ছে। 

ছাত্রজনতা এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে এরকম ঝামেলা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে পার্শ্ববর্তী দেশ এবং পতিত সরকার আরো তীব্র গতিতে তাদের উদ্দেশ্যে সফল করতে এগিয়ে আসবে। এতে জাতির বৃহত্তর স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং স্বাধীনতা আবার বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে। যা কোনমতেই আমাদের কারোরই কাম্য নয়। 

তাই দেশ প্রেমিক ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মী সকলের প্রতি আবেদন, দেশের সংস্কার করুন, সংস্কারের পর নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়ে চাঁদাবাজি, দুর্নীতিমুক্ত ভালো, সুন্দর, সভ্য, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন। যদি আমরা সৎ, নীতিবান ভাবে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করি এবং বর্তমান প্রজন্মের তরুনদের ইচ্ছাকে প্রবীনদের সঙ্গে সমন্বয় করি,তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ সুন্দর দেশের মধ্যে অন্যতম হবে।

সবার দেশ/কেএম

সম্পর্কিত বিষয়: