সোনার চালের ভাত
লক্ষ কোটি বেকারের দেশে রিসোর্ট বিলাস! একজন মানুষের জীবনে কত টাকার প্রয়োজন? টাকার অংকসীমা কত হলে তার মনে সুখ আসতে পারে?লক্ষ কোটি টাকার মালিক হলে তো স্বর্ণের চাউলের ভাত খাওয়া যাবেনা। বড়জোর চিকন কোন চাল, নাজির শাইল, বাশঁমোতি বা অন্য কোন জাতের চাল দিয়ে ভাত রান্না করতে হবে। তাহলে মানুষ কিসের আশায় মজে থাকে টাকার নেশায়?
বনভোজনে এসেছি গ্রীন ভিউ ‘গল্ফভিউ রিসোর্ট’ শ্রীপুর, গাজীপুরে। প্রথিতযশা কোন স্থপতি'র কল্পনার বাস্তব চিত্র হয়ে ফুটে উঠেছে রিসোর্ট টি। প্রাকৃতিক গাছ-গাছালি, ফুল বাগানের সাথে সমন্বয়ে নজরকাড়া বিভিন্ন নির্মাণ শৈলীতে কৃত্রিম দালানকোঠা তৈরি হয়েছে এখানে।
সুইমিংপুল, গলফ খেলার মাঠ এবং একটি হেলিপ্যাডও আছে। কোন বিলাসী মানুষ সঙ্গীসহ নিজে বা পরিবার নিয়ে যানজটযুক্ত নগরীর জঞ্জাল কে এড়িয়ে সরাসরি যে কোন প্রান্ত থেকে এখানে নিমিষেই আসতে পারবেন। আধুনিক সব সুবিধাকে মাথায় রেখে এখানে তৈরি করা হয়েছে বাসযোগ্য কিছু স্যুইট। ঘোরাঘুরির পর খুব আরাম করেই এখানে বিশ্রাম নেয়া যাবে। একান্ত নীরবে নিভৃতে কেউ চাইলে রাত যাপনও করতে পারবে, যেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেনা অনাকাঙ্ক্ষিত, উটকো কোন ঝামেলা।
কিন্তু কথা হলো এ সব কিছু সুবিধা নিতে হলে প্রয়োজন হবে অনেক টাকার। কেবলমাত্র ধনী শ্রেণীর লোকজনই তা উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।
প্রশ্ন হলো আমাদের এ তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশ বাংলাদেশ, এখানে কত পারসেন্ট লোক আছেন এরকম সুবিধা পাবেন এবং এ সুবিধা পেতে গেলে যে অর্থনৈতিক যোগ্যতা প্রয়োজন তা কতজনেরই-বা আছে।
সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এবং মধ্যবিত্ত কেউ এগুলো পাবেনা। আর আমাদের সমাজে পয়সাওয়ালা লোক যারা আছেন, তাদের কজনই বা সৎ উপায়ে অর্জন করেছেন।
আরও পড়ুন<<>> তরুন-প্রবীনের ইচ্ছাকে সমন্বয়ের মধ্যেই শান্তি নিহিত
তাহলে দেখা যাচ্ছে এখানে বেশিরভাগই অসৎ লোকের যাতায়াত। বর্তমান সমাজে এমন অবস্থা হয়েছে যে সৎ উপায়ে অর্জন করে কেউ বড়লোক বা ধনী হতে পারে না। অসৎ উপায়ে ধনী হতে গিয়ে ওই সকল লোকেরা বিভিন্নভাবে কত সাধারন মানুষকে প্রতারিত করেছেন তা সমাজের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা সবাই কমবেশি বুঝতে পারি।
ব্যতিক্রম কখনও উদাহরণের শামিল নয়, হাতে গোনা কিছু ধনী আছেন যারা সৎভাবে উপার্জন করে ধনী হয়েছেন।
বাংলাদেশে ধনী ব্যক্তিদের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, কারা কারা আছেন এ তালিকায়। এদের মধ্যে আছেন বেশিরভাগ আমলা, রাজনীতিবিদ, অসৎ ব্যবসায়ী, প্রতারক চক্র এনারা। দুর্নীতিবান সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যেও অনেকই ধনী হয়েছেন সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে। আর বেসরকারি লোকজনের মধ্যে অনেকেই ব্যবসার কথা বলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণ খেলাপীর মাধ্যমে ধনী হয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্পপতিরা শেয়ার বাজারে নতুন নতুন ব্যবসা খুলে গরীবের শেয়ারের অংশ চালবাজি করে ধনী হয়েছেন।
পরিশেষে, যে রিসোর্ট এর কথা উল্লেখ করলাম জনশ্রুত আছে সেটি আমাদের ‘ছোট’পা’ করেছেন। যদিও বাংলাদেশের একটি শিল্প গ্রুপের মালিকানাধীন পরিচয়ে সেটি চালু আছে। পাঠক, ইতোমধ্যে হয়তো বুঝে গিয়েছেন, ‘কে এ ছোট’পা’ তিনি এখন ফেরারি অবস্থায় আছেন । বলুনতো এতো বড় ধনী হবার পরেও কি তিনি ‘সোনার চালের ভাত’ খেতে পারছেন এখন?
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।