Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৪:০০, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৪:০২, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

শান্তি খোঁজে, যবে আঁখি বোজে

শান্তি খোঁজে, যবে আঁখি বোজে
সবার দেশ

শান্তি এক জায়গায় আছে ভাই, কিছু না হতে চাওয়ার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি শান্তি। দেখলেন না বছর বিশেক আগে এলাকায় বাজার সমিতি করার সময় কিছুই চাইনি। কিন্তু কারো কারো মনের ইচ্ছা ছিলো ভিন্ন তাই শত চেষ্টা সত্ত্বেও তখন সেখানে বাজার সমিতি হতে পারেনি। শ্রদ্ধেয় সালাউদ্দিন ভাই, কিবরিয়া ভাই এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজেরও তাই মনে কোনও আফসোস ছিলোনা। কারন আমাদের এ তিনজনেরই ব্যক্তিগতভাবে কিছু চাওয়া পাওয়ার আশা ছিলোনা।

উপরোল্লেখিত কথাগুলো আমাদের এলাকার এক বড় ভাই (একজন ব্যবসায়ী) ওনাকে উদ্দেশ্য করে প্রতিত্তোত্তরে ফেসবুকে লেখা। বিগত বছরগুলোতে তিনি নিউমার্কেট থানা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। 

আমি চিরকালই বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি সৎ ভাবে ব্যবসা করেছি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং এলাকার ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ থাকার উদ্দেশ্যে বাজার সমিতি গঠন করতে চেয়েছিলাম। ওপরে দুই বড় ভাইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারাও বাজারের ব্যবসায়ী। আমরা তিনজন মিলে চিন্তা করলাম ব্যবসায়ী সমিতি করে অত্র অঞ্চলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করবো। যাতে স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ীদের অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ক্ষতি কেউ করতে না পারে । বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের যেন কোন গোষ্ঠীর চাঁদাবাজির শিকার  হতে না হয় সেজন্য। 

আমরা তিনজন চেয়েছিলাম বাজারের ছোট বড় সকল ব্যবসায়ীকে ঐক্যবদ্ধ করে খাটি একটি সংগঠন করে দিতে। আমাদের তিনজনের কারোই নেতা হওয়ার কোন ইচ্ছে ছিলোনা, যা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মিটিংগুলোতে আমরা প্রকাশ্যে বলেছি। কিন্তু অদৃশ্য একটি গোষ্ঠীর ইচ্ছার কারণে তা বাস্তবতায় রূপ পায়নি।

 তখনকার সময়ে যারা বাজারকে লিড করতে চাইতেন তারা মনে প্রানে চেয়েছিলেন যে, উদ্যোক্তা এ তিনজন কেনো? তারা কেনো উদ্যোক্তা হতে পারলেন না বা হলেন না। মানুষের মনে কোন চিন্তা কিভাবে কার মাথায় প্রথম আসবে, সেটা তো জানেন শুধু একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তো জানার কথা নয়। মহান সৃষ্টিকর্তার সে ইচ্ছাতেই হয়তো আমরা তিনজন আলাপ প্রসঙ্গে একটি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা প্রথম করেছিলাম। এরকম ভালো সৎ উদ্দেশ্যে কোন চিন্তা করা তো কারও জন্য কোন অপরাধ নয়। বিপরীতে আমরা যাদের সাহায্য চাইলাম তারা ছিলেন এলাকার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গণ্যমান্য ব্যক্তি, যাদেরকে নিয়ে আমাদের কাজগুলো করতে হবেই। বিকল্প অন্য কিছু ছিলোনা। 

কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের দাঁতে ঠোঁট কাটছিলেন। উপরে উপরে আমাদেরকে ভাব দেখালেও পেছনদিকে অন্য কিছু চিন্তা করতে ছিলেন । তাই স্রষ্টা বাস্তবে এ এলাকায় এরকম কোন সংগঠন হতে দেয়নি। 

আজ সে বড় ভাইয়ের ফেসবুকে কিছু লেখা দেখে মন্তব্য করতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো পুরো কাহিনী। উনি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘পৃথিবী থেকে আসলে কেউ শান্তিতে যেতে পারেনি’। 

তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও কর্মী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তার নিজের দল পরিবর্তন করে অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যুক্ত হলেন এবং ওয়ার্ডের নেতা হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন। 
তার এ যে উপলব্ধি এমনি এমনি কিন্তু আসেনি। বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থা এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কিন্তু উনার মনে এরকম ভাবনা এসেছে। অন্তত বিগত ৫০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এ মন্তব্য করেছেন, যা শতকরা অংকে প্রায় শতকের কাছাকাছি সত্য। 

আরও পড়ুন<<>> ওহে বাজি! চুরির দানে আল্লাহ নহে রাজি 

তাহলে আসলে শান্তি কোথায় আছে? শান্তি কখনও পাওয়ার মধ্যে থাকেনা, ত্যাগের মধ্যেই বাস করে। কথায় আছে না 'ভোগে নয়, ত্যাগেই শান্তি'। আর কেউ যদি কারো কাছে কোন কিছু পাওয়ার আশা না করে, তাহলে তার অশান্তিতে ভোগার কোন চান্স নেই।
 
তাই শান্তি বা বিনা পেরেশানিতে থাকতে চাইলে কারো কাছে কোন কিছু  চাহিদা না করাই উত্তম । স্বয়ং স্রষ্টা থেকে যা প্রাপ্ত হবে অথবা নিজের যোগ্যতায় কেউ যা পায় তা নিয়ে সন্তুষ্টির মধ্যেই আসল শান্তি নিহিত।
পরিশেষে শান্তি আর অশান্তি একই মায়ের পেটের সহোদর দুই ভাই। যেখানেই শান্তি সেখানে অশান্তিও থাকবে, আবার যেখানে অশান্তি সেখানেও শান্তি আসন্ন, শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘ফাইন্না মাআ'ল উসরে ইউসরান, ইন্না মাআ'ল উসরে ইউসরান’। অর্থাৎ দুঃখের পরই স্বস্তি, দুঃখের পরেই স্বস্তি।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: