উপদেষ্টা মহোদয়ের উপলব্ধি, ন্যায়পরায়ণ সচিব এবং সুন্দর বাংলাদেশ
বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের মহাসাগর পরিমাণ দুর্নীতির কথা। দুর্নীতির কিসসা এখন টক অফ দ্যা টাউন।
‘নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছে’- চলমান দুর্নীতি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মুখে এ কথা শুনতে আমার খুবই ভালো লাগলো। একই সাথে মজা লাগছে এ ভেবে যে, উনি যখন সচিব ছিলেন তখন এ কথাগুলো খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করে বাস্তবতায় তার স্বাক্ষর রাখলে খুবই ভালো হতো।
সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদ আগে সচিব, বর্তমানে সিনিয়র সচিবেরা। রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা যদি নিজেরা যত্নবান হতেন এবং সঠিক নিয়মকানুন মেনে পরিচালনা করতেন, তাহলে তাদের অধঃস্তন কারোই সাধ্য ছিলোনা কোন অন্যায়, অনিয়ম বা এমন কোন খারাপ কাজ করার।
সচিব, সিনিয়র সচিব হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। তারা যদি যথাযথ নিয়ম পালনে অভ্যস্ত হন, তাহলে একটি রাষ্ট্র সুন্দরভাবে অগ্রসরতায় এগিয়ে যায়। আর তা না হলে বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের যে অবস্থা, তেমনটি হয় বা ভবিষ্যতেও অনুরূপ হবে।
সচিবদের উপরে থাকেন মন্ত্রী মহোদয়। ইচ্ছে করলেই তারা সচিবদের দিয়ে অন্যায়ভাবে কোন নিয়ম পালন করাতে পারেন না, যদি সচিবরা নিয়ম পালনে সাংবিধানিক বিধি মাফিক কর্তব্য কর্মে স্থির থাকেন। আর যদি কখনো কোন মন্ত্রী মহোদয় সংশ্লিষ্ট সচিবকে অন্যায় কোন আদেশ করেন, তখন সংশ্লিষ্ট সচিব যদি সাহসী ভূমিকা নিয়ে জনসমক্ষে তা পাবলিক করে দেন, সে মন্ত্রী মহোদয় তাহলে কিন্তু হার মানতে বাধ্য হবেন। কিন্তু এরকম কোন ঘটনা বিগত ৫৩ বছরে কখনও বাংলাদেশের মাটিতে আমরা হতে দেখিনি।
তাদের সামনে এখন সময় এসেছে ন্যায়-নীতি অবলম্বন করে তাদের কার্যক্রম চালনা করার। রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য জাতীয় স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেয়ার। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী মহোদয়কে বিনয়ের সাথে যদি স্মরণ করিয়ে দেন যে, এমন কোন কাজ আমাদের কারোরই করা উচিত হবে না, যা রাষ্ট্র ও জনস্বার্থের বিপরীতে হয়। কিন্তু আমরা দেখছি ঠিক তার উল্টোটা। উপদেষ্টাগণ সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়া চেষ্টা করলেও সচিবগণ আমলাতন্ত্রের গেঁড়াকলে ফেলে তাদের পূরনো ধাঁচেই কাজ করে যাচ্ছেন। যদিও ২৪ এর ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সচিবদের সাহসী হওয়ার সুযোগ আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তারা সাহসী হচ্ছেন, কিন্তু রাষ্ট্রের কল্যাণের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন<<>> শান্তি খোঁজে, যবে আঁখি বোজে
সনাতনী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমরা সবসময় দেখে এসেছি যে, মন্ত্রী আর সচিবরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে ব্যক্তি বা দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন । যার কারণে আমরা সাধারণ জনতা সব সময় ভোগান্তির কবলে পড়েছি । রাষ্ট্র ঋণগ্রস্থ হয়েছে বিদেশিদের কাছে। সে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা সাধারণ জনতা কর দিয়ে যাচ্ছি সময় সময় । রাষ্ট্রীয় ঋণ শোধ করতে গিয়ে সাধারণ জনতার উপর কর বাড়িয়ে জনতার ভোগান্তি দিনে দিনে শুধু বেড়েই চলছে, যা কোন মতেই কাম্য নয়।
ব্যক্তিগত ও দলের স্বার্থ রক্ষাকারী লোভী রাজনৈতিক সরকারের জনতার স্বার্থ বিরোধী চিন্তা চেতনার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা আকন্ঠ দুর্নীতিতে মগ্ন হয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতেই সদা ব্যস্ত থাকেন।
তাই মাননীয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তার সঠিক উপলব্ধির জন্য। এখন দেখার পালা অন্যান্য উপদেষ্টা মহোদয় এবং সচিব সাহেবেরা কি চিন্তা-ভাবনা করেন এবং তাদের কর্ম পরিচালনা-ই-বা কেমন হয়।
এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, উপদেষ্টা মহোদয়রা সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিলে এবং আমাদের সচিব মহোদয়রা যদি সঠিকভাবে নিরপেক্ষতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে অবশ্যই সামনে সুন্দর বাংলাদেশ আমাদের জন্য অপেক্ষমান।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।