Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৭:০৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উপদেষ্টারা কোন পথে

উপদেষ্টারা কোন পথে
ছবি: সবার দেশ

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেছেন পাঠাগারগুলোতে কোন কাজ হয়নি, এবার পাঠাগারগুলোতে এয়ারকন্ডিশন বা শীতাতপ  নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে দেবো।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করতে গেলে প্রথমেই যা প্রয়োজন, তা হলো রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বাজেট নিতে হবে এবং সে বাজেট খরচ করে সংশ্লিষ্ট কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তার মানে কি দাঁড়ায়, নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় খরচের কলেবরই শুধু বৃদ্ধি পাবে। 

আমার মনে হয় প্রথমেই একজন উপদেষ্টার চিন্তা করা উচিত রাষ্ট্রের ইনকাম কিভাবে বাড়ানো যায়। কেনোনা আয় বৃদ্ধি না করে ব্যয় করা তো নির্বুদ্ধিতার লক্ষণ। এখন কথা হলো রাষ্ট্র কিভাবে আয় করতে পারে। 

বিভিন্নভাবে আয় করতে পারে, রফতানি করে, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভূত পলিসি বিদেশে বিক্রি করে এবং এরকম আরও অনেক কিছু। 

কিন্তু আমাদের দেশে শুধুমাত্র জনগণ থেকে কর আদায় করেই রাষ্ট্রীয় আয় করা প্রচলন হয়ে আছে। আবার ব্যয় করা হয় ঠিক এ আয় থেকেই। ফলে দেখা যায় উপদেষ্টা বা মন্ত্রীদের চিন্তাপ্রসূত কোন কাজ বাস্তবায়ন করতে হলে টাকা ব্যয় করতে হয়। নতুন কোন কাজ করতে হলে পুনরায় কর আদায় করতে হয় অর্থাৎ জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে তা অর্জন করতে হয়। আর এভাবেই বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্য পীড়িত জনসাধারণের উপর করের বোঝা দিনকে দিন বেড়েই চলে, সাম্প্রতিক দিনগুলো তাই দেখা গিয়েছে। 

মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় কে বিনীত অনুরোধ করবো নতুন কিছু ভাবুন। শুধুমাত্র লাইব্রেরীকে এয়ারকন্ডিশন করে দেশকে উন্নয়ন করা যাবে না। লাইব্রেরীতে কিভাবে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো যায় সেরকম কিছু করুন। পাঠকদের কীভাবে লাইব্রেরীতে আনা যায় এবং তাদেরকে সেখান থেকে শিক্ষা দিয়ে শিক্ষিত জ্ঞানী করা যায়, যা রাষ্ট্রের জন্য সম্পদ হিসেবে কাজে লাগতে পারে, সেরকম কিছু ভাবুন। 

আরও পড়ুন<<>> জনকল্যাণমুখী আমলাতন্ত্র গঠনে দরকার সামাজিক আন্দোলন

লাইব্রেরীগুলোকে পরিবেশবান্ধব খোলামেলা, যাতে করে আলো বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারে, এরকম করে তৈরি করুন। এয়ারকন্ডিশনিং করতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন হতে পারে, তাই পুরনো গুলোতে নামমাত্র খরচ মূল্যে এমন পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করুন, যাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে খরচের চাপ না বাড়ে, জনগণের বোঝা না হয়। তখন বুঝবো আমাদের উপদেষ্টারা সত্যিকার অর্থে বুদ্ধিমান এবং দেশপ্রেমিক। ছোট বাচ্চাদের মতো বাজারে কোন জিনিস চকচকে দেখলেই, তা নিজের করে পেতে চাওয়ার ইচ্ছে নিশ্চয়ই এতো বড় পদের মানুষের হতে পারে না। কারণ জাতি এত বড় পদের মানুষদের কাছে আরো বড় কিছু আশা করে। 

উপদেষ্টাদের উচিত নিজস্ব জ্ঞান বুদ্ধি এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগানো। শুধুমাত্র আমলাদের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করলে, সেখানে জনতার উপকার না হয়ে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা আছে তাও গভীরভাবে ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কেননা বিগত দিনগুলোত আমলা, মন্ত্রীদের কার্যক্রমের মধ্যে আমরা জনগণের সন্তুষ্টি দেখতে পাইনি। বিগত সরকারও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে টাকা নিয়ে জনতার ওপর সবসময় করের চাপ বাড়িয়েছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি করে জনগণের সম্পদ নিজেদের করে নিয়ে বেগম পাড়াতে আলিশান বাড়ি করেছে। এ কাজগুলো নিশ্চয়ই তারা ইচ্ছে করে শুধু নিজেরা করতে পারেনি, নিশ্চয়ই দুর্নীতিবাজ কিছু সংখ্যক আমলাদের সাথে যোগসাজশ করেই করেছে। এখন তারা পালিয়ে বিদেশে রাজা মহা-রাজাদের মত জীবন যাপন করছে। 

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আপনারা নিশ্চয়ই তাদের মতো হতে চান না। আমরা বিশ্বাস করি যে, আপনারা জাতিকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দিতে এসেছেন।  যে ছাত্র জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আপনাদের মসনদে বসিয়েছে, দয়া করে তাদের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করুন। নিজের বিবেককে ব্যবহার করুন। কারো প্রতি আসক্ত হয়ে বা কারো চোখ রাঙানিতে নিজের দায়িত্ব কর্ম থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনাদের ন্যায্য, ন্যায়-নীতি সম্পন্ন কাজের মাধ্যমেই বাংলাদেশের জনগণ সন্তুষ্ট হবে ‌। 

আপনারাই পারবেন, খুব চিন্তা ভাবনা করে সুপথে হাঁটুন। আর যদি না পারেন, নিজেকে যোগ্য না মনে করেন, তাহলে যোগ্যতর কাউকে নিজের পদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সসম্মানে আগের জায়গায় ফিরে যান ।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: