‘শয়তানের খোঁজে অস্ত্রোপচার’

‘Operation Devil Hunt’ সরল ভাবে বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘শয়তানের খোঁজে অস্ত্রোপচার’। গাজীপুরে পরাজিত শক্তির দোসরদের দ্বারা কিছু ছাত্র আহত হবার ঘটনায় সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
একটা প্রশ্ন মনে উঁকি দেয় যে, ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা নিয়ে সেনাবাহিনী মাঠে আছে, তারপরও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কিভাবে হয়। তাহলে কি ওই বাহিনীর কর্মকাণ্ডে কোন ফাঁক আছে? যাই হোক ওই ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করতে চাচ্ছি না, বর্তমানে হাতে নেয়া ‘শয়তানের খোঁজে অস্ত্রোপচার’ কর্মসূচি শতভাগ সফলতা লাভ করুক সে কামনা করি। সত্যিকার অর্থেই মাঠে ঝামেলা সৃষ্টিকারী শয়তানগুলো ধরা পড়ুক এবং তাদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার নিশ্চিত করা হোক।
আর একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। যে কোনও সংবাদপত্র কর্তৃক কোনো সংবাদ পরিবেশন হওয়ার আগে সে সংবাদের সত্যতা এবং তার যথাযথ মেসেজ, তথ্য যেন জনতার কাছে পৌঁছে সে ব্যবস্থা করা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু গাজীপুরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনায় দেখা গেলো যে, দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকা এমন শিরোনাম করল, যাতে দোষী ব্যক্তির দোষ ঢাকা পড়েছে সংবাদ শিরোনামের আড়ালে। যা জনতার হৃদয়ে আঘাত হেনেছে।
কথা হলো, যে সত্যিকারের দোষী তাকে যথাযথ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া বা প্রকাশ করা উচিত। যদি সেরকম সত্য প্রকাশিত না হয়ে শব্দের মারপ্যাঁচে শয়তান প্রকৃতির কাউকে সাধু বানানোর চেষ্টা হয়ে থাকে, তাহলে তা শুধু ঐ সংবাদপত্রের মানই ক্ষুন্ন করে না, বরঞ্চ জনপদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। জনতা কর্তৃক ঘৃণিত হয়ে একসময় সে পত্রিকা জনতার মাঝ থেকে হারিয়ে যাবে বলে আশা করা অত্যুক্তি হবে না।
তাই যারা সংবাদমাধ্যমে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করছেন, তাদের সকলেরই খেয়াল করা দরকার যাতে নিজের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে যথাযথভাবে পালন হয়।
সংবাদ মাধ্যম তো চাটুকারিতা বা মিথ্যা প্রচারের জন্য নয়, যদিও অনেকেই তা করে থাকেন। সংবাদ মাধ্যম হোক সবার জন্যপ্রিয় এক মাধ্যম, যেখানে সত্যনিষ্ঠ, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশিত হবে । যে যে ধর্ম বা আদর্শ পালন করুক না কেনো, সত্য প্রকাশে কোন খেলাপ করবেন না, এমন হওয়া উচিত। তবেই সে সংবাদপত্রের মান সঠিক জায়গায় থাকবে, প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জাতি উপকৃত হবে।
আশা করছি ‘শয়তানের খোঁজে কর্মসূচি’ চলমান অবস্থায় বাংলাদেশের সকল সংবাদপত্র সত্য নির্ভর, তথ্যপূর্ণ, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারে দায়িত্ববান থেকে জাতিকে অগ্রসরতার দিকে এগিয়ে নিবে।
আরও পড়ুন<<>> উপদেষ্টারা কোন পথে
স্বৈরাচারী সরকারের যারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে তারা তো গিয়েছেই। কিন্তু যারা দেশে তাদের দোসর হিসেবে কাজ করে দেশকে অস্থিতিশীল করছে এবং আপামর জনতার শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে পারে বলে মনে হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবশ্যই উচিত হবে তাদেরকে যে কোনও মূল্যে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা। পাশাপাশি ছাত্র জনতা দেশগড়ার সহায়ক যে সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করে তাদের সহায়তা করা, নিরাপত্তা দান করা, যাতে সে স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে এসে জনগণকে আবার সে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে না পারে।
পরিশেষে স্বৈরাচারীর দোসর যারা আছেন, তারাও তো এ দেশেরই জনতার একটি অংশ। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো স্বৈরাচার কর্তৃক নেতাদের অনেক কাজ অপছন্দ করে থাকেন, কিন্তু দল করার কারণে তাদের দলীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে বাইরে যাওয়ার সুযোগ ঘটে না। তাদের এখন সময় এসেছে, দেশের শান্তিকামি মানুষের সাথে মিশে গিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা এবং নিজেদের ভুল শুধরে নিজেদেরকে ভালো মানুষ হিসেবে রূপান্তরিত করা। তাহলেই জাতি একসাথে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে এবং সুন্দর স্বদেশ ভূমি তৈরি হবে । আর তখনই ছাত্র জনতার আকাঙ্ক্ষার শান্তির দেশ আমরা পাবো । যেখানে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করে অনন্তকাল আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিতে পারবে প্রিয় মাতৃভূমির সুনীল আকাশের নিচে।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।