Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৭:৪৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আমলাতন্ত্রের সংস্কার প্রয়োজন সর্বাগ্রে 

আমলাতন্ত্রের সংস্কার প্রয়োজন সর্বাগ্রে 
ছবি: সবার দেশ

মন্ত্রী, উপদেষ্টা আসেন-যান, নতুন নতুন উদ্যোগ নেন. আড়ালে আমলা হাসে-
যা খুশি তাই নাও না কেনো, আমাদের তাতে কি যায় বা আসে? 

ভাবখানি এমন, বাস্তবতায় অন্তত তাই মনে হয়। মন্ত্রী  বা উপদেষ্টা আসে যায়, আমলারা তো রয়েই যায়। বাংলাদেশের মন্ত্রী বা উপদেষ্টাদের মেয়াদ সাধারণত চার বা পাঁচ বছর হয়, বিপরীতে আমলাদের কমপক্ষে ২৫ বছর। 

সরকার এক টার্ম থাকতে থাকতেই অনেক আমলায় তাদের দোসর হয়ে যেতে আমরা দেখেছি বিগত দিনগুলোতে। অসৎ আমলারা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে লোভী মন্ত্রীদের তথ্য সরবরাহ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর নিজেদের ভাগ বাটোয়ারায় তাদের সঙ্গী হয়ে থাকেন।

আর এ লোভী আমলারা যখন মন্ত্রণালয়ে নতুন কোন সৎ মন্ত্রী বা উপদেষ্টা আসেন, তখন তাদেরকে বিভিন্ন রকমের বুদ্ধি দিয়ে থাকেন। কাজ করতে গিয়ে কখনো কোন মন্ত্রীর মতামতের সাথে কোন আমলার মতের অমিল হলে সে আমলা সরাসরি তাকে বলার সাহস করে না। তখনই বিপত্তি বাজে এবং সে আমলা মন্ত্রীকে এমন একটি ইস্যু ধরিয়ে দেন সমাধান করার জন্য, যাতে সে ইস্যুতে তিনি জনতার চিন্তার বিপরীতে এগুতে থাকেন। কেননা আইনের ফাঁকফোকর এর বিষয়ে মন্ত্রীর চেয়ে আমলা বেশি ওয়াকিবহাল। ফলশ্রুতিতে জনতা সে মন্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। 
 
গতানুগতিক আমলা তৈরীর মেশিন হলো পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসি। তাই সর্বাগ্রে সেখানেই সবচেয়ে বড় সংস্কারের প্রয়োজন। কেননা ব্রিটিশ আমলের তৈরি করা আইনে এখনও বাংলাদেশে যে আমলা তৈরি করা হয়। তারা জনতার আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে পারেন না বা বাস্তবায়ন হতে দেয় না, বরং নিজেরা প্রভু হয়ে জনসাধারণের উপর খবরদারি করেন।

রাষ্ট্র কাঠামোয় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিভাগ হলো নির্বাহী বিভাগ। আর এ নির্বাহী বিভাগের মন্ত্রণালয়ের মূল কাজগুলো করে থাকেন একজন সচিব মহোদয়। সচিব সাহেবেরা যদি সততা, ন্যায় নিষ্ঠার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের কাজগুলো পরিচালিত করেন, তাহলে একটি রাষ্ট্র অবশ্যই ধাবমান গতিতে উন্নতির পথে ধাবিত হয়। তাই এ বিভাগের কর্মকর্তা তৈরির মেশিন বা পিএসসি' সদস্যদের অবশ্যই কলুষ মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। যাতে সদস্যরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে সত্যিকারের যোগ্য মানুষকে পিএসসি কর্তৃক নির্বাচিত করতে সক্ষম হন। 

আরও পড়ুুন<<>> দেশকে প্রদেশে বিভক্তিকরণ, অর্থনৈতিক ভাবনা

কিন্তু বিগত বছরগুলোতে আমরা প্রায়ই শুনতে পেয়েছি যে, প্রায় প্রতি বছরই বিসিএস পরীক্ষায় প্রশ্ন জালিয়াতি হয়েছে এবং টাকার বিনিময়ে অথবা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনেকেই নিয়োগ পেয়েছেন। 

অসাধুভাবে বা টাকা দিয়ে যারা নিয়োগ পান, তারা পরবর্তীতে এ টাকা উঠানোর জন্য নিজেরা অন্যায় কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পদমর্যাদার ক্ষমতা ব্যবহার করে, জনতার হক মেরে দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে টাকা উপার্জন করেন এবং ঘরের শত্রু বিভীষণ হিসেবে কাজ করতে থাকেন। পরবর্তীতে যাদের দিয়ে রাষ্ট্রের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই হয়ে থাকে বেশি। 

তাই প্রথমেই আমলা তৈরীর কারিগর যারা হবেন, তাদের মেধাবী, সৎ, নির্লোভ, অকুতোভয়, যোগ্য, স্বচ্ছ প্রকৃতির ব্যক্তি হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। ওরকম ব্যক্তি দ্বারাই সে পদগুলো পূরণ করতে হবে। তবেই সঠিক যোগ্য আমলা তৈরি হবে এবং সে ধরনের লোকদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করলে, রাষ্ট্র সঠিক গতিতে সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে।

করিৎকর্মা, সু-বিবেকবান, নৈতিক চরিত্রে বলীয়ান, মানসিকভাবে দৃঢ়তার অধিকারী, সত্যিকারের দেশপ্রেমিক আমলারা তখন সৎ ও যোগ্য মন্ত্রী বা উপদেষ্টার নির্দেশ সঠিকভাবে পালন করবেন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি অথবা মন্ত্রী উপদেষ্টাদের কোন অনৈতিক নির্দেশ আসলে, তা বিনয়ের সাথে মতভিন্নতা তাদের বোঝাবেন, যাতে জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে কোন কাজ সংঘটিত না হতে পারে। আর তখনই রাষ্ট্র সঠিক গতিতে সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে উপরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে, যা বিবেকবান প্রত্যেকেরই একান্তভাবে কাম্য।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: