Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ০০:৪৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উন্নয়নের নামে চলে দুর্নীতির ভাউচার তৈরি

উন্নয়নের নামে চলে দুর্নীতির ভাউচার তৈরি
ছবি: সবার দেশ

রমনা পার্কের ভেতরের একদম পশ্চিম পাশে একটি নার্সারি আছে, সারা বছর এ নার্সারিতে বিভিন্ন প্রকারের ফুলের চাষ করা হয়। বসন্তের শুরু পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আমি নার্সারিতে একটি ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ তৈরি করার জন্য প্রবেশ করি।

জনসাধারণের প্রবেশ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে ওই নার্সারীর পশ্চিমদিকে 'বাংলাদেশ বেতারে'র বাউন্ডারি ওয়াল। বাকি তিনদিকে লোহার ফেন্সিং আছে। লোহার গেটও আছে তালা মারা থাকে। ফেন্সিং এর একটি বৃহৎ অংশের লোহার দণ্ড ঠিকই আছে কিন্তু কোন জাল বা বেড়া নেই, কিছু এমনি এমনি নষ্ট হয়েছে, আর কিছু অংশ কে বা কাহারা খুলে নিয়ে গেছে। ওরকম একটি ফাঁক গলে যে কোনও প্রাণী বা মানুষ নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে, তাই আমিও বিনা বাঁধায় সেখানে প্রবেশ করলাম।

যেইমাত্র মোবাইল ফোনে ক্যামেরায় একটি গাছের ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করতে লেগেছি, ঠিক তখনই এক ব্যক্তি এসে আমাকে বাধা দিলেন এবং বললেন- ভাই এখান থেকে সরে যান তাড়াতাড়ি। কারণ, কিছুক্ষণ পর পিডব্লিউডির লোক আসবে। 

- ভাই আমি তো কোন খারাপ কাজ করতে এখানে আসিনি, একটি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করে চলে যাবো, আমি এখান থেকে কোন ফুল ছিড়বোনা। 
- না ভাই এখানে ঢোকা নিষেধ, আপনি চলে যান।

আমি তার কোনো জবাব না দিয়ে আপন মনে আমার কাজ করতে লাগলাম।
ঐ ব্যক্তি জানেই না যে, আমি আরও বেশ কয়েকদিন একইভাবে এখানে প্রবেশ করেছি এবং পূর্বেও ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছি, তখন কিন্তু কেউ আমাকে বারণ করতে আসেনি। 

কাজ শেষে উনাকে আমি বললাম, 
- ভাই  এখানে কোন লোক প্রবেশ করলে আপনি বরং তাকে ভালো করে খেয়াল করবেন যে, সে বাগানের কোন ক্ষতি করছে কিনা। কেউ যদি এখান থেকে গাছ বা ফুল ছিঁড়ে, তাহলে তাকে অবশ্যই শুধু বারণই করবেন না, বরং তাকে কর্তৃপক্ষের মুখোমুখিও করবেন, এটি আপনার অধিকার। যাই হোক, অবশেষে আমি ভিডিও ক্লিপ ঠিকই সংগ্রহ করলাম এবং তারও ছোট্ট একটি সাক্ষাৎকার নিলাম।

আমি এখানে যা বলার জন্য উদ্দেশ্য করেছি প্রিয় পাঠক, বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমি রমনা পার্কে সকাল বেলা জগিং করার জন্য আসি। এখানে গাছ গাছালি লাগানো, নতুন করে মাঠে বালি দেয়া, নতুন ঘাস লাগানো এবং লাইটিং পোস্ট, প্রসাধন কক্ষ নির্মাণ এবং অন্যান্য উন্নয়ন কাজ নিয়মিত চলতে থাকে দেখতে পাই। 

ধানমন্ডি লেক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্কে আমার দীর্ঘ তিন যুগের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। জনসাধারণের উন্মুক্তভাবে ঘুরাঘুরি বা সময় কাটানোর জন্য তৈরি করা এরকম স্থানে সবসময়ই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়। 

পার্কের ভেতরে নতুন বাথরুমগুলো করোনার সময় নতুন করে উদ্বোধন করা হয়েছে। তার মাত্র দু’ তিন বছর আগে নির্মিত সম্পূর্ণ ব্যবহার উপযোগী বাথরুমগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছিলো। ঠিক এভাবেই আমি গত তিন দশক ধরে নিজে দেখতে পেয়েছি যে, একবার একটি উন্নয়ন কাজ হওয়ার পর, তিন চার বছরের মধ্যেই পুরনোগুলো ভেঙ্গে আবার নতুন তৈরি করা হয়। পাঠক, আপনারা যারা এ স্থানগুলির আশেপাশ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, এখনও শিশু পার্কের চারদিকে টিনের ফেনসিং দেয়া এবং ভেতরে নির্মাণ কাজ চলমান আছে। হঠাৎ দেখতে পাবেন যে পূর্ণ স্থাপনা আর নাই নতুন কিছু তৈরি হয়ে গিয়েছে। 

আরও পড়ুন<<>> আমলাতন্ত্রের সংস্কার প্রয়োজন সর্বাগ্রে 

অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যুগ সাহায্যে জনগণের করের টাকা এভাবে উন্নয়নের নামে তসরুফ করছে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা। জনপ্রতিনিধির কথা এজন্য বললাম যে, তাদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরকমটি করে থাকেন। ঠিক তেমনটিরই একটি হলো পিডব্লিউডি বা গণপূর্ত বিভাগ।

কিন্তু একটি সিভিল স্ট্রাকচার বা নির্মাণ কাঠামো একবার তৈরি হলে তা কমপক্ষে ১০০ বছর টিকে থাকার কথা। এটি অবশ্য কারিগরি কথা, তা যদি নাও হয়ে থাকে, তবু কমপক্ষে ২০-৫০  বছর টেকার কথা। কেনোনা , আমরা যখন নিজেদের বাড়ি নির্মাণ করি তখন সেগুলো কি ৫-১০ বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়ে বা তা কি আমরা পাঁচ বছরের মধ্যে আবার ভেঙ্গে ফেলি। তাহলে এখন কথা হলো যে, এ পার্কের মধ্যে যে কাঠামোগুলো নির্মাণ করা হয় তা কেনো কয়েক বছরের মধ্যেই ভেঙ্গে ফেলা হয়? এটা কি কখনো আপনারা ভেবে দেখেছেন? 

এ ভাঙ্গা গড়ার ইচ্ছা আপনাদেরকে বলতে গেলে আমার প্রবন্ধ অনেক লম্বা হয়ে যাবে, সেজন্য সংক্ষিপ্ত করে বলি। এহেন দুষ্কর্মের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত এক প্রকার কন্ট্রাক্টর এবং কারিগরি কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত। তারা নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য একটা সিন্ডিকেট করে রেখেছে এবং সে সিন্ডিকেট একটি সময় অন্তর অন্তর নতুন করে কার্যাদেশ দেয় এবং ভাঙ্গা গড়ার এ খেলার মাঝে নিজেরা লাভবান হয়। এভাবে বারবার চলতে থাকে। 

গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী, ঠিকাদার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এরকম দুর্নীতির সুবাদে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অনেক টাকা অপচয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, ঐ চৌকিদারের উচিত ছিলো এ ধরনের কাজ যারা করে এবং একবার উন্নয়ন কাজ করে গেলে সেগুলো কারা নষ্ট করে তাদেরকে খবরদারি করা এবং তাদের এগুলো করতে না দিয়ে রাষ্ট্রের অপচয় বন্ধ করা। সেটি না করে সে ফুল বাগানে লোককে প্রবেশ করতে না দেয়ার জন্য সাবধান করছে এটি কতটুক যৌক্তিক?

পরিশেষে বলবো দেশে নতুন রাজনৈতিক হাওয়া বইছে, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে আসুন আমরা সবাই যার যার দায়িত্বে নিজেদের জায়গা থেকে সৎ থেকে সঠিক কাজটি করে জাতিকে সেবা দেই, নতুন সুন্দর বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: