সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপরাধের পুনরাবৃত্তিরোধে করণীয়

বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে গতকাল ৪ জেলার এসপি সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন কক্সবাজার জেলার এসপি রহমতুল্লাহ সাহেব ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এ সাময়িক বরখাস্তে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না, তাকে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিলে এরকম অপরাধ কমে যাবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সাধারণ জনতার সরলতাকে পুঁজি করে নির্বাচনে ভোট পেয়ে সংসদে গিয়ে এমপি হয়ে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেন। দেখা যায়, বেশিরভাগ সময়ই তারা নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা প্রথম করেন। অর্থাৎ তাদের দ্বারা কোন অপরাধ কর্ম সংঘটিত হলে, সে অপরাধ যাতে জনসমক্ষে না আসে এবং আসলেও যাতে তারা পার পেয়ে যান, আইন তৈরি করার সময় তারা সেরকম আইন তৈরি করেন।
একইরকমভাবে বিভিন্ন সরকারি দফতর, পরিদফতরের আইনও তৈরি হয়ে থাকে। যে কারণে বরাবরের মতোই একই অপরাধ তাদের দ্বারা বারংবার সংঘটিত হয় এবং তারা পার পেয়ে যান। অথচ যদি এমনটি হতো যে, একই অপরাধে দেশের সাধারণ নাগরিকদের যে শাস্তি হয়, বিশেষ ব্যক্তিবর্গ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমপি মন্ত্রী, এমনকি রাষ্ট্রপতিও (সাংবিধানিকভাবে যেহেতু কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়) তাদেরও একই সাজা হতো, তাহলে অনেকেরই নৈতিকতার উন্নতি হতো এবং এই ধরনের অপরাধের মাত্রা কমে যেতো।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা দেখছি যে, হাতে গোনা গুটিকয়েক লোক ব্যতীত বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করেন তারা সকলেই নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য করেন। তেমনি ভাবে সরকারি চাকুরিতে যারা সেবা দিতে যান তাদেরও মনে সুপ্ত বাসনা থাকে যে, পদ পদবী ব্যবহার করে সুযোগ পেলে তিনি আগে নিজের আখের গোছাবেন, তারপরে অন্য কথা। তাই আমাদের দেশে বারবার এরকমটি ঘটতে থাকে।
এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের কাজে বেসামরিক কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও আগ্রহের তেমন কোন কমতি থাকে না। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আমাদের দেশের বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যেও এ ধরনের অসাধু কাজে আগ্রহের মাত্রা বেড়েছে, যা জাতির জন্য এক ভয়ানক বিপদের কারণ।
গতানুগতিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র এবং নিয়ম-নীতির ব্যবহারিক প্রয়োগ যদি একই রকম চলতে থাকে, তাহলে সামনের দিনগুলোতে এ অবস্থার আরও বেশি অবনতি ঘটবে নিশ্চিত। তাই যত কষ্টই হোক প্রয়োজনে সময় লাগুক এর সংস্কার হতেই হবে, সংস্কার ছাড়া কোন গতি নেই।
প্রচলিত যে সমস্ত আইন বিদ্যমান আছে, তা যদি সত্যিকারভাবে সুষ্ঠু ও ন্যায় ন্যায্যতা সহকারে বিচার হয় তাহলেও কিন্তু এ ধরনের অপরাধ কমে যাবে। কিন্তু আমাদের বিচার ব্যবস্থার যে হাল, এখানে মানুষ নিজেকে শোধরাবে তো দূরের কথা, আরও বেশি অপরাধী হয়ে ওঠে।
আর্র পড়ুন<<>> উন্নয়নের নামে চলে দুর্নীতির ভাউচার তৈরি
তাই শত গোপনীয়তার পরেও জাজ্বল্যমান দু’একটি অপরাধের চিত্র আলোর মুখ দেখেছে। যেমন গতকাল ৪ জেলার এসপি সাহেবদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ জনসমক্ষে এসেছে এবং সরকার তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করে নিজ নিজ জায়গা থেকে ঢাকায় সদর দফতরে আসতে নির্দেশ দিয়েছে।
এক্ষেত্রে যদি এমনটি হতো, তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত না করে সরাসরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সোপর্দ করা হতো, তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত বিচার করে চাকুরীচ্যুত করা যেতো, তাহলে অবশ্যই এ ধরনের অপরাধ যারা করে তাদের টনক নড়বে এবং ভবিষ্যতে অন্যরা এরকম কাজ করতে অন্তত কয়েকবার ভাববেন।
গণঅভ্যুত্থানের ফসল যে সরকার এখন দায়িত্বরত আছেন, তাদের দ্বারা দ্রুত বিচার করা খুবই সম্ভব এবং তা করা উচিত হবে বলে মনে করছি। জাতিকে আগামী দিনে বিপদমুক্ত করতে হলে দ্রুতবিচারের বিকল্প নেই। তাই সরকারের কাছে আবেদন দ্রুত তাদের বিচার করুন এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনাদের কাছেও আবেদন রইল, জাতিকে আশু বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করুন।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।