Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৪:৪৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৭:৫০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘লাউ-কদু’ আর ‘বিপ্লবী’ সরকারের পার্থক্য থাকা উচিত

‘লাউ-কদু’ আর ‘বিপ্লবী’ সরকারের পার্থক্য থাকা উচিত
ছবি: সবার দেশ

জনপ্রিয় পরিবহন মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০শে ফেব্রুয়ারি সময় বেধে দিয়েছে তাদের বিধিমালা প্রণয়ন করে তাদেরকে জানানোর জন্য, না হলে তারা পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করে দিবে!

তাহলে কি ‘ডি এম টি সি এল’ বা মেট্রোরেলে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের ভূত বিদ্যমান? প্রশ্ন থেকে যায়।

মেট্রোরেল পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ব্যবস্থা। ঢাকার অসহনীয় যানজট থেকে মানুষকে কিছুটা মুক্তি দিয়েছে এ পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমানে ঢাকা হচ্ছে আন্দোলনের নগরী প্রতিদিনই এখানে কোন না কোন আন্দোলন হচ্ছে এবং যার পুরো চাপ রাজপথগুলোতে এসে পড়ে। ফলশ্রুতিতে জনসাধারণের অসহনীয় ভোগান্তির মাত্রা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। 

মেট্রোরেল, হাসপাতাল, বিদ্যুত, ওয়াসা, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিসসহ এরকম জনপ্রিয় ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন, তাদের আন্দোলনের ধরণ অন্যরকম হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী নিজেরাও দেশের নাগরিক, তাই যে কোনও ধরনের ধর্মঘট হলে তার আঁচড় তাদের উপরও পড়তে বাধ্য। 

কথায় কথায় আন্দোলন, এটিই বা কেমন একটা অবস্থা! যারা আন্দোলন করছেন তাদের মধ্যে আবার পতিত সরকারের দোসররা কলকাঠি নাড়াচ্ছেন নাতো, সে ব্যাপারটিও বিবেচনায় নিতে হবে। 

তাদের মধ্যে এরকম শয়তান প্রকৃতির এক বা একাধিক লোক থাকলে প্রথমে তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং ধর্মঘট পরিহার করে যৌক্তিক দাবি নিয়ে সরকারের সাথে সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। যাতে জনসাধারণের কোনোরূপ ভোগান্তি, কষ্ট বা দুর্ভোগ না হয়। সরকারেরও উচিত তাদের সাথে বসে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে দেওয়া।

মিরপুর ১০ থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত মেট্রোরেল মেরামতের খরচ হয়েছিলো মাত্র বিশ কোটি টাকা এবং মিরপুর ১০ স্টেশন তিন মাসের মধ্যেই চালু হয়েছিলো। যদিও বিগত স্বৈরাচারী সরকার বলেছিলো যে, বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের আনতে হবে এবং কমপক্ষে এক বছর লাগবে তা মেরামত হতে। খরচ হবে সাড়ে তিনশো কোটি টাকা।

জনগণের ভালোবাসা এবং যথাযথ সম্মান প্রাপ্তিযোগ্য সরকারি কর্মকর্তা মেট্রোরেলের সম্মানিত এমডি মহোদয় আব্দুর রউফ সাহেবের ঐকান্তিক চেষ্টা ও সঠিক নির্দেশনায় সে মেরামত কার্য দ্রুততম সময়ে ঠিক করা হয় । বর্তমানে তার বলিষ্ঠ অভিভাবকত্বে  বেশ সুন্দর ভাবেই এ পরিবহন ব্যবস্থাটি চলমান আছে। 

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এমডি মহোদয় যেহেতু আশ্বাস দিয়েছেন অচিরেই প্রণীত বিধিমালা পাওয়া যাবে, তাই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচিত হবে তার নির্দেশনা অনুসরণ করে জনগণের ভোগান্তি না ঘটিয়ে আন্দোলন ও সেবা দান একসাথে চালিয়ে যাওয়া। আশা রাখছি যে, সরকার এবং পরিবহন ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌথ প্রয়াসে অচিরেই একটি সুন্দর সমাধান হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

পতিত ভুতের দৃষ্টি অন্যান্য জায়গায়ও সমান ভাবেই সক্রিয় আছে। 

সম্প্রতি কক্সবাজারে আলোচিত ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতি মামলার আসামি ও বিতর্কিত সরকারি কর্মকর্তা ‘আলামিন পারভেজ’কে দুদকে পদায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আলী আকবর আজিজী সাহেব বলেছেন, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি যাচাই করে সত্যতা পেলে তাকে তার মাতৃসংস্থায় ফেরত পাঠানো হবে। তাহলে কি অতীতের ভূত ভূমি অধিদফতর থেকে দুদকে এসেছে?

ওদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের লকার খোলাকাণ্ডে এসকে সুর সাহেবের দুর্নীতির প্রমাণ জনসমক্ষে প্রকাশের জন্য আলোচিত দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ‘কাজী সাইমুজ্জামান, সাহেবকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নালিশ সাপেক্ষে অন্যত্র বদলি করে দেয়া হয়েছে ।

এসব চলছেটা কি? বুঝতে আর বাকি থাকে না যে, এখনও আমলাতন্ত্রের মধ্যে ভূত বসে আছে, মানে সরিষায় ভূত। এ সরিষার ভূত তাড়ানোর জন্যই তো ছাত্র জনতা আন্দোলন করেছে, তাহলে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে হচ্ছেটা কি ?

তাহলে কি বাংলাদেশ ব্যাংকেও অতীতের ভূত বিদ্যমান আছে?

ভুত! ভুত!! ভুত!!! সর্বত্রই ভূত বিদ্যমান। এ সমস্ত ভূতের বদলি-পদায়ন, পদায়ন-বদলি এ ভানুমতির খেল অতি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। ভূতকে সত্যিকারের ভূত মানে অতীত করে দেয়া যায় কিনা, বর্তমানে যারা নীতি নির্ধারণী দায়িত্বে বা ক্ষমতায় আছেন, তাদের অবশ্যই অবশ্যই এবং অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরও পড়ুন<<>> সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপরাধের পুনরাবৃত্তিরোধে করণীয়

রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিনষ্টের জন্য সংশ্লিষ্ট দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। যত বড় পদেই থাকুক না কেনো, দ্রুত তাদেরকে চাকরিচ্যুত করতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে যে লাউ সেই কদু হবে। কিছুদিন পর এ প্রবাদ বাক্য আবারো প্রচন্ড রকমের জনপ্রিয় শব্দে পরিণত হবে ‘যেই লাউ সেই কদু’।

‘যেই লাউ সেই’ কদু অবস্থা ঠেকাতে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ছাড়া কোন উপায় নেই। এ সরকার যেহেতু ছাত্র জনতার সরকার, অতএব গণঅভ্যুত্থান আর বিপ্লবী বলি এ সরকারই বিপ্লবী সরকার । তাই এ সরকারের উচিত ছাত্র জনতাকে সাথে নিয়ে সমস্ত অন্যায় অনাচার গুছিয়ে দিয়ে  দেশে সাম্য ন্যায্যতার বৈষম্য মুক্ত শাসন ব্যবস্থা চালু করা।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।