Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ০১:২২, ২ মার্চ ২০২৫

রমজানে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি এবং স্রষ্টার পুরস্কার

রমজানে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি এবং স্রষ্টার পুরস্কার
ছবি: সবার দেশ

খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারিত দরের চেয়ে লিটারে ২৮ থেকে ৩৩ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। রমজানের আগেই যদি এ অবস্থা হয় রমজানে তাহলে রমজানের সামনের দিনগুলোতে কি হবে? 

এ দেশের ব্যবসায়ীরা কেমন? তাদের বেশিরভাগই তো মুসলিম, তারপরও তাদের কলিজাতে আল্লাহর ভয় নেই । খারাপ কাজ যে সমস্ত লোকেরা করে তাদের সাজা অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে, তারা দুনিয়াতেই তা পেয়ে যান। তা দেখেও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে তেমন একটা দেখা যায় না। আমাদের ব্যবসায়ী সমাজে বেশিরভাগ লোকেরই বর্তমানে এমন অবস্থা। পরকালে চিন্তা তাদের মাথাতে তেমন আসে না, দুনিয়ায় সম্পদশালী হতেই তারা ব্যস্ত। 

অতীতে যারা এমনটি করেছে তাদের দুনিয়াতে অনেক সাজা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসার কাজে লিপ্ত থাকাতে সেদিকে তারা নির্বিকার। তাদের চাই লাভ, টাকা আরো টাকা, দ্রুত টাকা কামাতে পারলে ধনী হওয়া যাবে এবং ক্ষমতাধর বনে যাওয়া যাবে। তারপর আর কি, এক সময় সুবিধা বুঝে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা অথবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নেমে পড়বেন । এ তো দেখে আসছি আমরা বিগত দশকের পর দশক! 

এ যদি হয় মানুষের মানসিকতা, তাহলে সে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ না হয়ে ভালো হওয়ার তো কোনো জো নাই। একবার টাকা কামাতে পারলে ধনী লোকের কাছে সকল অন্যায় ন্যায় হয়ে যায়।

ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার মূল্য সংযোজন করে ছাড় দিয়েছে। গতবছর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখ পর্যন্ত দেশে তেল আমদানি হয়েছিলো ১ লাখ ২০ হাজার টন, এ বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টন। আর্জেন্টিনার বন্দরে সমস্যা থাকায় ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে যে ট্যাংকারগুলো আসার কথা ছিলো তা ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এসেছে, এখন দেশে তেলের সরবরাহ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। 

কিন্তু মূল্য সংযোজন কর কমানোর পরেও তেলের দাম কমেনি, আরো বেড়েছে, এখন আবার বাজার থেকে তেল উধাও।

ব্যবসায়ীদের মনে রাখা উচিত রমজানে সারা বিশ্বের মানুষ তাদের পন্যের মূল্য কমায় আর আমাদের দেশে সব সময় বাড়ে! এ বিষয়ে ধর্ম বা শাস্ত্র কি বলে। ‘জীবে দয়া করে যে জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর’। দয়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র ন্যায্য কাজ করলেই ব্যবসায়ীদের জন্য মানুষ দোয়া করতো, বিশেষ করে এ রমজানে। 

আরও পড়ুন<<>> নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ, রাজনীতিবিদদের নিকট জনতার প্রত্যাশা

ব্যবসায়ী ভাইয়েরা আপনাদের কাছে আহ্বান এ রমজানে আপনাদের জ্ঞান যেন ফিরে আসে, তা না হলে আবারো স্মরণ করুন আল্লাহ পাক যা বলেছেন পবিত্র কুরআনে তা হলো, প্রত্যেক লোক তার কৃতকর্মের কিছু অংশ দুনিয়াতে এবং কিছু অংশ আখেরাতে ভোগ করবে। অর্থাৎ কঠিন শাস্তি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে । 

এছাড়াও শরীয়তের নিয়ম অনুসারে এ সমস্ত মজুদদারী করাতে আপনার অর্জন হালাল তো হবেই না বরং সে অর্জিত টাকা-পয়সা দিয়ে কোন এবাদত করলে তাও আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না, যতই আপনি কাবা শরীফে গিয়ে মাথা ঠোকান, ওমরাহ করেন, যাকাত দেন, সদকা করেন, তা কোনও কাজে আসবে না। তাই দাম না বাড়িয়ে মনের পাপ ঝেরে মুছে ফেলে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চান । আল্লাহর নির্দেশ দেয়া বিধান অনুসারে ব্যবসা করেন, তাহলে আপনাদের জন্য মহাপুরুষ্কার রয়েছে, যে পুরস্কার কোন ইসলামিক পন্ডিত, আলেম-ওলামা, ফকির দরবেশ, পীর-মাশায়েখের জন্য আল্লাহ রাখেননি  বরং পুরষ্কার দেবেন শুধুমাত্র হক-হালাল উপায়ে যারা ব্যবসা করেন তাদের। কেননা হাদীস অনুযায়ী একমাত্র সৎ ব্যবসায়ীরাই সিদ্দিকীন, সালেহীন দের সাথে জান্নাতুল ফেরদৌস এ অবস্থান করবেন। 

মানুষের উপকার করলে আল্লাহ আপনার উপর রহম করবেন । তাই রমজানে পণ্যমূল্য কমাতে না পারলেও অন্তত বাড়াবেন না। আশা করি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের বোধোদয় হবে এবং দেশের মানুষ ভোগান্তি হতে মুক্তি ও শান্তি পাবে।

বিবেকবোধ জাগ্রত হলে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যেতে পারে ব্যবসায়ীরা।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।