Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ৭ মার্চ ২০২৫

নতুন দল, নির্বাচন, ছাত্রজনতার আকাঙ্ক্ষা ও সমকালীন ভাবনা

নতুন দল, নির্বাচন, ছাত্রজনতার আকাঙ্ক্ষা ও সমকালীন ভাবনা
ছবি: সবার দেশ

ছাত্ররা নতুন দল খুলেছেন ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ বা ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এন সি পি)। জাতি তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। তাদের অনেকেই ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের প্রধান নেতা নাহিদ ইসলাম রাষ্ট্রের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করে এ পার্টিতে আহবায়ক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। 

বাংলাদেশের ইতিহাসেই তিনিই প্রথম, যিনি ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার পূর্বে কেউ কখনও এভাবে পদত্যাগ করেননি। এমনকি যথেষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ ক্ষমতায় থেকেছেন। আর তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে একটি দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন। অনেক অনেক শ্রদ্ধা এ উপদেষ্টার প্রতি। আশা করি এমন মহৎ দৃষ্টান্ত যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি নিজেকে উজাড় করে নিঃস্বার্থভাবে ভবিষ্যতে জাতিকে আরো অনেক কিছুই উপহার দিতে সমর্থ হবেন ইনশাআল্লাহ। 

এ ছাত্রনেত্রীবৃন্দ ও জনতার মধ্যে থেকে অনেকেই স্বৈরাচার হঠাতে নিজের জীবন দান করেছেন, শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের সাধারণ জনতা এ বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রবক্তা ছাত্রজনতাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। জনতা চায় তারা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুক। তাই তারা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বাংলাদেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলের প্রায় সকলেই নতুন এ দলকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি অনেক রাজনৈতিক দলেরই নেতাকর্মীদের আচার-আচরণ, কথাবার্তায় বোঝা যায় যে, তারা ভেতরে ভেতরে হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করছেন এ ছাত্রদের প্রতি। 

তাদের মনে হয় এমনটি যে, ছাত্ররা তাদের পাকা ধানে মই দিতে এসেছে। বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে কোন রাজনৈতিক দলই বাংলাদেশের সাধারণ জন মানুষকে মুক্ত স্বাধীনতার স্বাদ দিতে পারেনি। যারাই দেশ শাসন করেছেন, তারাই নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। জাতির প্রতি তাদের যা করণীয় ছিল, তা তারা কেউ তা করতে সক্ষম হয়নি। যতবারই নির্বাচন হয়েছে, নির্বাচনের আগে তারা জাতির কাছে গিয়েছে ভোটের জন্য, কিন্তু ভোট প্রাপ্তির পর সংসদে বা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে তারা জনতার পক্ষে তো নয়, বরং জনতার বিপক্ষে কাজ করেছেন। সাধারণ জনতা সব সময় শুধুমাত্র কর দিয়েই গিয়েছে বিনিময়ে তেমন কিছুই পায়নি। বিপরীতে যারা সংসদ সদস্য এবং যারা শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে বড় বড় পদ আসীন হয়ে ছিলেন, তারা জাতীয় স্বার্থের তুলনায় নিজেদের স্বার্থের কথাই বেশি চিন্তা করেছেন এবং দেদারসে নিজেদের পকেট ভারি করেছেন । 

আরও পড়ুন<<>> ছিনতাইকারী এবং স্বার্থপর সরকারি আমলা, কে বেশি ক্ষতিকারক!

‘ব্যতিক্রম উদাহরণের শামিল নয়’ কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মচারী এবং হাতে গোনা দুই একজন সংসদ সদস্য অথবা রাজনীতিবিদ ভালো আছেন অবশ্যই। কিন্তু আনুপাতিক হারে তারা ধান্দাবাজ স্বার্থপরদের তুলনায় একেবারেই গৌণ। তাই জাতিকে তারা খুব ভালো কিছু উপহার দিতে চাইলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের বিপরীতে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেননি, বরং নিজেরা কোনঠাসা হয়ে দলে পড়ে থাকতে হয়েছে। সেজন্যই বাংলাদেশের জনতা নতুন আশার আলো দেখছে এ ছাত্রদের চেতনা এবং ঘটিত নতুন দলের প্রতি।

৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের খেলা দেখেছি। আরেকবার নয়তো এ ছাত্রদের খেলাই দেখি। তারপরে তুলনা করে বোঝা যাবে যে, কারা জাতির স্বার্থে এবং কারা জাতির আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে কাজ করেছে। তা সময়ই বলে দিতে পারবে।

তাই আসুন, আমরা ছাত্রদের সমালোচনা না করে তাদের ছোটখাটো ভুল ত্রুটি থাকলে, তাদেরকে তা ধরিয়ে দিয়ে তাদের সাথে একসাথে মিলে এ দেশটিকে গড়ে তুলি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে নিঃসন্দেহে সত্য যে, এ জাতি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। 

ছাত্রদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে পুরনো রাজনীতিবিদদের মধ্যে যারা এ মুহূর্তে নির্বাচন দিলে ক্ষমতায় যাবেন বলে ধারণা করছেন, তারাও তো নিশ্চয়ই সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চান। তাই আসুন না, সবাই মিলে আমরা চেষ্টা করি। নির্বাচন তো অবশ্যই হবে, দেশটাকে আগে সংস্কার করে তারপরে নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করি। কারণ তড়িঘড়ি করে নির্বাচন করে কোন একটি দল যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায়ও, বাঙালি বাংলাদেশী আমরা, বারবার আমাদের ‘চুন খেয়ে মুখ পুড়েছে’ তাই দই দেখলে ভয় পাই। আসুন না সত্য, সুন্দর, মার্জিত, নৈতিকতায় উন্নত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য কিছুকাল আমরা অপেক্ষা করি।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।