Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১২:৩৫, ১১ মার্চ ২০২৫

জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের উত্তম সময় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের

জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের উত্তম সময় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের
ছবি: সবার দেশ

বাড়ির সদর দরজার সন্নিকটে লম্বা তাল গাছের মত ঠায় দাঁড়িয়ে বিদ্যুতের একটি খাম্বা বা পোল। আপনার নিকট তা যতই খারাপ লাগুক না কেনো, বিদ্যুৎ বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কিন্তু তেমন খারাপ লাগছে না বরং তাদের খুবই ভালো লাগছে। আপনি হয়তো ভাবছেন- কেন ভালো লাগছে, এমন ভাবনা কেন আসলো মনে! 

একটু পরেই পরিষ্কার বুঝতে পারবেন এমন ভাবনার আসল রহস্য, পড়তে থাকুন, সামনে আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন নিশ্চয়ই। 

একটি খাম্বার চেয়ে আরেকটি খাম্বার নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকে। বিদ্যুতের লোকেরা সে দূরত্ব অনুযায়ী বসানোর সময় এগুলো বসানোর কাজ করে থাকেন। অনেক সময় তারা সঠিকভাবেই কাজটি করে থাকেন। কিছু কিছু সময় তা করেন না। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন এলাকাতে এ ধরনের কাজ বেশি হয়ে থাকে। আবাসন শিল্পে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানি বিল্ডিং নির্মাণ করে থাকেন এবং উক্ত স্থাপনাতে একটি সদর দরজা রাখেন। ওই সদর দরজার কাছে কোন থাম্বা থাকলে গাড়ি প্রবেশে এবং বের হতে সমস্যা হওয়ার কারণে তারা থাম্বা সরানোর প্রার্থনা দেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দিষ্ট দফতরে। 

মনে করুন, আপনি একটি এলাকায় বাস করেন। সে এলাকা বা এমন কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ করেন নির্দিষ্ট দফতরে। ওই কোম্পানির প্রার্থনার বিপরীতে তখন তারা দায়িত্বশীল কর্মচারীকে পাঠান সরেজমিনে দেখে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য। এখানেই আসল রহস্য! 
সাধারণভাবে প্রার্থনা পেয়ে সরেজমিনে প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পরপরই ঘটনার সত্যতা সাপেক্ষে ওই খাম্বা বা পোল জনগণের স্বার্থে সরিয়ে দেয়ার কথা। জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কাজতো এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই তারা এমনটি না করে লাল ফিতার দৌরাত্ব টের পাইয়ে দেন নির্দিষ্ট গ্রাহককে। দিনের পর দিন সে গ্রাহক ঘুরে বিরক্ত হয়ে অবশেষে তাদের সাথে লেনদেনের প্রস্তাব রাখেন। সেটিকে উৎকোচ, উপহার, বাড়তি টাকা অথবা স্পিড মানি যাই বলেন না কেন, তাই আর কি। 

আরও পড়ুন<<>> নতুন দল, নির্বাচন, ছাত্রজনতার আকাঙ্ক্ষা ও সমকালীন ভাবনা

উভয় পক্ষের সব ঠিকঠাক থাকলে একসময় দেখবেন কাগজপত্র সব ঠিক হয়ে যায় এবং সমস্যাজনিত জায়গা থেকে খাম্বাটি স্থানান্তর হয়ে একটু দূরে পাশেই স্থাপন করা হয়। আশা করি পাঠক এখন আর আপনাদের বুঝতে বাকি নেই আসল রহস্য।

এ হলো আমাদের বাংলাদেশ, ৫৪ বছরে গঠিত বড় সাধের, প্রাণের বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের কারিগরি দফতরগুলোতে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা আসীন আছেন জাতিকে সেবা দেয়ার জন্য। এরকম ভাবেই তারা বিগত দশকের পর দশক ধরে জাতিকে সেবা দিয়ে আসছেন আর বিনিময়ে শহরের দৃষ্টিনন্দন, দামী এলাকায় তাদের ফ্ল্যাট বা প্লট গড়তে পেরেছেন।

অথচ দেখুন একজন বিবেকবান কর্মকর্তা কর্মচারীদের আসল করণীয় কি ছিলো, বিশেষ করে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যদি তারা কর্মরত থাকেন। জন মানুষের সেবার জন্য নিজের বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমেই জাতীর প্রতি তাদের ঋণ শোধ করার কথা। কেননা তাদের বেতনের টাকাতো তারা এ জাতির সাধারণ জনতার করের মাধ্যমেই পেয়ে থাকেন। 

এরকম রাষ্ট্রের অন্যান্য দফতরের চিত্রও একই রকম। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় এখন রাষ্ট্রে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আছেন। এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে নিরপেক্ষ সরকার। এখন তো সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তা ব্যক্তি ইচ্ছে করলেই স্বাধীনভাবে নিজের কাজ করতে পারেন। সেখানে কেউ তাকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না। তাই সকল সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের এখন কি বিবেকবোধ জাগ্রত হবে যে, আসলে আমাদের করণীয় কি, যেহেতু খুব নিরপেক্ষ একটি সময় আমাদের হাতে। তাহলে নিজেদের লোভ সংবরণ করে আমাদের দায়িত্ব আমরা সঠিকভাবে পালন করি। আমার লেখাটি যদি কোন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর চোখে পড়ে তাদের প্রতি একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে আকুল আবেদন রইলো আপনারা একটু নিজেদের দায়িত্বের প্রতি সচেতন হবেন। কেনোনা আপনারা এক এক করে সচেতন হলেই আমাদের এ বাংলাদেশ, সুন্দর বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: