Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ১৭:১৩, ২৩ মার্চ ২০২৫

ACR যদি Annual Confessional Report হয়, বদলে যাবে সমাজ 

ACR যদি Annual Confessional Report হয়, বদলে যাবে সমাজ 
ছবি: সবার দেশ

উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক অধঃস্থন কর্মচারী বা কর্মচারীদের সারা বছরের কাজকে মূল্যায়ন করে যে প্রতিবেদন দেয়া হয় তা হলো ACR (Annual Confidential Report)। অর্থাৎ ACR হলো সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তার বার্ষিক গোপনীয় রিপোর্ট। বার্ষিক গোপনীয় রিপোর্টের মারপ্যাঁচে অনেক বোবা কান্না জমা হয়ে আছে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। যা ভুক্তভোগীমাত্র অজানা নয়। 

রমজানের দুপুরে অফিস সময় বন্ধুর দফতরে বসে দু'বন্ধু বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করছি। হঠাৎ একটা ফোন আসল বন্ধুর কাছে, ফোন ধরে তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে সে আমাকে বললো- আমার এক ঊর্ধ্বতন বস ফোন করে আমাকে অনুরোধ করলেন এক কর্মচারী বার্ষিক প্রতিবেদনে একটু ভালো মার্ক দেবার জন্য। অর্থাৎ তার বার্ষিক প্রতিবেদন যেন ধনাত্মক হয় যাতে পদোন্নতি প্রাপ্ত হতে তার কোন বাধা না থাকে। 
আমি তাকে বললাম- ও তাই নাকি! তোর কি করা উচিত?

বন্ধু__কি আর করা, স্যার যখন বলেছে একটু তো দেখতেই হবে।
আমি- না না তা হবে কেনো, এটা তো একদমই ঠিক না ‌। যদিও আমি তোর মতো সরকারি চাকরি করি না, তারপরও বলবো তোর অধঃস্থন কর্মচারী তোর দৃষ্টিতে যতটুকু নাম্বার পাওয়ার অধিকারী, তোর তরফ থেকে ঠিক ততটুকুই দেয়া দরকার। অর্থাৎ যেকোনও মূল্যায়ন ন্যায়-ন্যায্যতা অনুসারে, ইনসাফভিত্তিক হওয়া দরকার, যাতে কেউ না ঠকে।

বন্ধু- আমাদের দেশে কি আর এরকমটি হয় বল!
আমি- তোরা শুরু করলেই হবে।
বন্ধু- তুই ঠিকই বলেছিস, আসলে সবকিছুই স্বচ্ছতা ন্যায্যতা ও ইনসাফভিত্তিক হওয়া দরকার। আমরা যদি ভালো কাজের চর্চা অব্যাহত রাখি, তাহলে আমাদের সমাজ বদলে যাবে নিশ্চয়ই।

গতানুগতিক পদ্ধতিতে কর্মচারীদের বার্ষিক কাজের মূল্যায়ন আমাদের দেশে যেভাবে করা হয়, তাতে করে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয় শুধু । কাজের কাজ কিছুই হয় না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপরীত হয়।  

কর্মচারীরা নিজেদের চামচামি তথা তোষামোদির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন স্যারকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তার মূল্যায়ন ভালো হয়, আর তা না হলে বিপরীত অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মূল্যায়ন সঠিক হয় না। 

আরও পড়ুন <<>> ভদ্র ব্যবহার সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার

এ গতানুগতিক বার্ষিক প্রতিবেদন পদ্ধতি বদলে যদি এটাকে গোপনীয় না রেখে প্রকাশ্যভাবে দেয়া যেতো, তাহলে ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রের উপকার হতো। তখন আর কেউ কারও উপর বে-ইনসাফি করতে পারতেন না। 

তাই Annual Confidential Report বা ACR না হয়ে হওয়া উচিত Annual Confessional Report
অর্থাৎ বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন না হয়ে, বার্ষিক প্রকাশ্য প্রতিবেদন হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেশি কার্যকরী হতো। তখন কোনও বড়কর্তা তার অধঃস্থন কারও প্রতি অন্যায় করতে পারতেন না। প্রতিবেদন টা গোপনে করাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিনা বাধায় তার খামখেয়ালিপনা বা ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন । আর প্রকাশ্যে হলে তা কখনোই সম্ভব হতো না। কারণ তখন যদি কেউ অন্যায় ভাবে কিছু করতে চাইতেন তাহলে তা প্রকাশিত হয়ে যেতো এবং তিনি সমালোচনার কবলে পড়তেন। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা কি ভেবে দেখতে পারি যে এখন থেকে ‘বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন’ না করে ‘বার্ষিক প্রকাশ্য প্রতিবেদন’ করবো।

আসুন নিজেকে বদলাই, সমাজকে বদলে দেই। ইনসাফভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার কারিগর হয়ে গর্বিত দেশপ্রেমিক হিসেবে বেঁচে থাকি।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: