‘বাটপার না জনতার বন্ধু’ কোনটি হবেন- সিদ্ধান্ত রাজনীতিবিদদের

‘বাটপার’ শব্দের অর্থ প্রতারণা করা, ডাকাত, লুটেরা, ভন্ড, শঠ, ঠক, মুখের উপর চুরি করে যারা, তাদের বোঝায়। এটি একটি বিশেষ্য পদ, ব্রিটিশ সরকার বাটপারি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো। তাদের ভাষায় বাটপারকে ‘টাউট’ বলে।
সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ সাহেব, যিনি একজন বড় মাপের বিএনপি নেতা, তিনি বলেছেন রাজনীতিতে বেশিরভাগ লোকই বাটপার। তার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা যখন একটি বিষয় সম্বন্ধে কথা বলেন, তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমরা সাধারণ জনগণ বিগত দশকের পর দশক ধরে রাজনীতিবিদদের ছলচাতুরি, প্রতারণা, জনগণের সাথে কথা দিয়ে কথা না রাখার যে প্রচলন দেখে আসছি, তাতে তাদেরকে বাটপার বলা ছাড়া আর কোনও উপায়ই থাকেনা।
অতি সম্প্রতি একটি বিরাট বাটপারের দল, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল যারা বাংলাদেশ বিরতিহীন ভাবে প্রায় দেড় দশক রাজত্ব করেছে। তারা জনগণের সাথে তাদের বাটপারি চালিয়েছিলো আগা গোড়া, সমর্থক, কর্মী থেকে নেতা সকলেই, অবশেষে তাদের পতন হয়েছে । তারা সবাই পালিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে আশ্রিত হয়েও তারা ক্ষান্ত হযননি বরং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বেড়াচ্ছে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য।
আরও পড়ুন <<>> রাস্তা এবং ফুটপাত হকারমুক্ত করতে করনীয়
আশ্চর্য লাগে এ ভেবে যে, নিজ দেশে বসবাসকারি বাটপারেরাও কিন্তু নিজ দেশকে ভালোবাসে । অন্তত বিদেশ এবং দেশের ব্যাপারে কোন তুলনা আসলে তারা দেশকে বেছে নেয়, দেশের কল্যাণ কামনা করে। কিন্তু ওই বাটপারের দল বিশেষ দেশকে ভালোবেসে নিজের দেশকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করতে চায়, তারাও কিন্তু রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাই মেজর (অব.) হাফিজ সাহেবের সংজ্ঞায়ন একেবারে মন্দ নয়, তিনি ঠিকই বলেছেন রাজনীতিবিদদের বেশিরভাগই বাটপার।
এখন প্রশ্ন হলো এক বিশাল বাটপারের দল তো চলে গেলো, তাহলে এখন কোন বাটপারেরা বহাল তবিয়তে বাংলাদেশে বিরাজমান আছে! তিনিই বা কেন এমনটি বললেন।
হ্যাঁ আছে, অবশ্যই আছে, আমরা চোখ কান খোলা রাখলে অসংখ্য বাটপার দেখতে পারবো আমাদের চতুরপাশে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগতভাবে আমরা অনেকেই কিছু কিছু বাটপারকে দেখতে পাই যে তারা বিভিন্ন জায়গায় বাটপারি করে বেড়ায়। তাদের মধ্যে অনেকেই মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং সাজাও ভোগ করে থাকে।
কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ বাটপারের দল যারা জনগণকে ধোকা দিয়ে নিজেরা সম্পদশালী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং জনগণকে জিম্মি করে জনতার উপর শোষণ কায়েম করে। স্বাধীনতার পর থেকে এরকম অনেক বাটপার, রাজনৈতিক দল বা বাটপারের দলকে আমরা দেখেছি । এ সমস্ত বাটপারের মধ্যে আবার আমাদের অনেকেরই আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবও আছেন। যাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা রাজনীতি করার পূর্বে ততটা ভালো ছিলো না। কিন্তু রাজনীতি করার ফলে তারা অনেকেই, বেশিরভাগই ধনিক শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে। ধনসম্পদ কামাই করার জন্যই অনেক লোক রাজনীতি করে আমাদের দেশে। কারণ তারা দেখতে পাযন চাকরি-বাকরি করে তেমন দ্রুত বড়লোক হওয়ার কোনও সহজ উপায় বাংলাদেশে নেই । একমাত্র উপায় হলো রাজনীতি করা, আর রাজনীতি করে বড় হতে পারলে, এমপি মন্ত্রী হয়ে তিনি স্থায়ী ধনী মানুষের আসনে চলে যেতে পারবেন এবং ক্ষমতাবান হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে পারবেন।
স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাটপারদের স্বর্গ রাজ্য ছিলো এ দেশ। সম্প্রতি ২৪ এর ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এ বাটপারদের কলিজায় কিছুটা ধরফর আরম্ভ হয়েছে এবং এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে বাটপারির ব্যবসা থেকে তাদের অনেককেই কেটে পড়তে হবে। সে ভাবনা রাজনীতিবিদদের অনেকের মধ্যেই একটা অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পরিশেষে রাজনীতিবিদদের কাছে প্রশ্ন তারা কি নিজেদেরকে বাটপার হিসেবেই দেখতে চান, নাকি সময়ের প্রয়োজনে নিজেকে পরিবর্তন করে, সত্যিকারের দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে দেশপ্রেমিক, জনবান্ধব এক একজন মহান নেতা হিসেবে জাতির কাছে চিহ্নিত হতে চান। সিদ্ধান্ত আপনার, জনগণ চেয়ে আছে নতুন বাংলাদেশ, শান্তির বাংলাদেশ দেখার জন্য। আপনারাই পারবেন দেশকে, শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে গঠন করতে । তাই প্রিয় রাজনীতিবিদ, আপনারা ভাবুন কোনটি করবেন।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।