Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ০০:০১, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ 

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ 
ছবি: সবার দেশ

ভালো হতে, ভালো কাজ করতে হলে পয়সা লাগে না, মনের সদিচ্ছাই যথেষ্ট । আপনি ইচ্ছে করলে আপনার মনের সুকুমার বৃত্তিগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি হয়তো বাদাম কাগজের প্যাকেটে ভরে খেতে খেতে কোন পার্কে বা উদ্যানে প্রবেশ করলেন, সুবিধামতো একটি জায়গা পছন্দ করে সেখানে বসে মনের সুখে বাদাম খেতে থাকলেন। খাওয়া শেষে বাদামের খোসাগুলো গুছিয়ে একটু কষ্ট করে সে কাগজের থলের মধ্যে ভরে রাখলেন। 

এখনতো পার্কে পায়ে হাঁটার চলার পথের পাশেই কিছুদূর পরপর ময়লা ফেলার বাক্স বা ডাস্টবিন দেয়া আছে। আপনার সময় কাটানোর শেষে ফিরে যাবার পূর্বে যেখানে ময়লার জায়গা আছে সেখানে ফেলে দিলেন। এমনটি করলে নিজের কাছেও ভালো লাগবে আবার নাগরিক দায়িত্বও পালন করা হবে। কিন্তু তার বিপরীতে যদি কখনও ওই ময়লাগুলো আপনি যেখানে বসেছিলেন তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটে ফেলে রাখেন, তাহলে অন্য কোন লোক চলাচলের সময় রাস্তায় আপনার দ্বারা করা ময়লা দেখতে পেলে কেউ আপনার প্রতি ঘৃণা ভরে একটা গালি দিবে না, এ কথার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। 

আমরা ছোটবেলায় আমাদের টেক্সস্টবুকে পড়েছি বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক পুস্তক ইসলামিয়াতে আরবিতে পড়েছি, ‘আত্তুহুরু ছাত্রুল ইমান’। এর মানে হলো- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। ঠিক আমাদের মতো করে অন্য ধর্মেও এরকম বাণী নিশ্চয়ই আছে। এছাড়াও উন্নত বিশ্ব তথা সভ্য জাতিগুলো তাদের পার্ক বা উদ্যান গুলোকে খুবই পরিষ্কার রাখে । 

অনেক আগে ১৯৯০ সাল আমার একবার সশরীরে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জাতীয় উদ্যান যার নাম ‘শান্তিবন’, সেখানে ঢুকে ঘুরার অভিজ্ঞতা আছে। আয়তনে তা আমাদের রমনা পার্ক থেকে অনেক বড়‌। সেখানে আমি আশ্চর্য হলাম এ দেখে যে, এত বড় পার্ক কিন্তু কোথাও কোন ময়লা আবর্জনা  আমার চোখে পড়েনি। শান্ত নিরিবিলি সুন্দর, সত্যিই সুন্দর শান্তিবন, মনে শান্তি এনে দিয়েছিলো আমার। 

আরও পড়ুন <<>> চাঁদাবাজি খতম করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই যথেষ্ট

ওই উদ্যানটি পরিষ্কারের পেছনে নিশ্চয়ই নিবেদিত প্রাণ একদল কর্মীবাহিনী কাজ করেন, যার জন্য তারা এভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে পেরেছেন। অর্থাৎ তাদের রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি অনেক আধুনিক এবং সদা সক্রিয়। 
কিন্তু আমাদের দেশে আপনি সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত যে কোন প্রতিষ্ঠান অথবা চিত্তবিনোদনের পার্ক বা উদ্যানে যেখানেই যান না কেনো, সেখানে ময়লার বাগাড় দেখতে পাবেন। বৈশাখের প্রথম দিনে বর্ষবরণ উৎসবে আগত শত শত মানুষ আমাদের ঢাকার রমনা পার্কে এসেছিলেন। তারপরের দিন সকালে গিয়েই পার্কে যা নজরে পরলো তা রীতিমতো ভয়ানক! যদিও অন্যান্য দিনেও ময়লা থাকে, তবে এরচেয়ে অনেক অনেক গুনে বেশি ময়লায় পরিপূর্ণ ছিলো পার্ক। পরের দিন সকালে যারাই প্রাত:ভ্রমণে পার্কে গিয়েছেন, তারা সবাই দেখেছেন, নিশ্চয়ই তাদের মনের উপলব্ধিও একই রকম হয়েছিলো। অনুষ্ঠান শেষে তা পরিষ্কার কিন্তু আমরা কেউ দেখিনি, তার মানে কি? এখানে যে কর্মী দল নিয়োজিত আছে তারা অলস অথবা কর্মে ফাঁকি দিচ্ছে । তাদের যারা নিয়ন্ত্রণ কর্তা সুপারভাইজার বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রয়েছেন তারাও তাদের থেকে সঠিকভাবে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছেন না । ফলশ্রুতিতে ফলাফল যা হবার তাই হচ্ছে, ভোগান্তি শুধু জনগণের। 

উপসংহার টানলে আমরা এভাবে টানতে পারি যে, যদি সঠিক মূল্যবোধ এবং নাগরিক দায়িত্ববোধ আমাদের মধ্যে সদা জাগ্রত থাকে তবে আমাদের দ্বারা এহেন দুষ্কর্ম সাধিত হতে পারে না। সরকারি স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত যারা আছেন, তাদের দায়ভার যদি তারা সত্যিকারভাবে নিয়মমাফিক পালন করতে সক্ষম হন, তবে এ অবস্থা বদলিয়ে জনগণের জন্য সুন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়। ফলে জনতার ভোগান্তি ক্রমে ক্রমে কমে গিয়ে এক সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে । তখন কর্মকর্তা কর্মচারী, সাধারণ জনতা আমরা সবাই এর সুফল ভোগ করতে পারবো। 

শুধুমাত্র সরকারি রক্ষণাবেক্ষণ কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের দোষ দিয়েও আমরা পার পাবো না। এখানে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সকলের সচেতন হওয়া দরকার, নিজেরা ময়লা এখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার অভ্যাস রপ্ত করা দরকার। 

প্রিয় পাঠক, আশা করি আমাদের সবারই সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, দায়িত্ববোধ জাগ্রত থাকবে সদা আমাদের মনে। আমরা সত্যিকারভাবেই আমাদের দেশকে ভালোবাসবো নিজের দ্বারা নাগরিক দায়িত্ববোধ সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে। তখনই ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ এ বিশ্বাস বাস্তব হয়ে উঠবে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারে।

লেখক: 
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী 
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: