ক্ষমতাবান নয়, দায়িত্ববান হয়ে দেশসেবা করুন

আপনি বিসিএস কর্মকর্তা অনেক সম্মানিত পদ, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা, ক্যাডার অফিসার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। ক্রমানুসারে ধাপে ধাপে উন্নতি হয়ে এখন সিনিয়র সচিব হয়েছেন, বেশ ভালো তো!
সুযোগ, সুবিধা, মান, সম্মান, ইজ্জত সামাজিকভাবে সবই পাচ্ছেন, আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন আপনাকে। সেজন্য তো সর্বপ্রথমেই আল্লাহর শুকরিয়া গুজারিশ করা দরকার। আপনার জায়গা থেকে আপনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে দেশের জনগণ আপনাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সম্মান দেয়া অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় আপনার পদই তো সর্বোচ্চ সম্মানের। আপনি নিজেকে উজাড় করে দেশের সেবা করে যাবেন এটাই তো জনগণের প্রত্যাশা।
কিন্তু একটি জিজ্ঞাসা- বিগত ৫৪ বছর ধরে আমরা কি দেখে আসছি বাংলাদেশে! আপনি পাবলিক সার্ভেন্ট বা জনগণের চাকর হয়েও নিজেদেরকে অভিজাত শ্রেণীর, জনগণের শাসক হিসেবেই মনে করেন আপনারা। অবশ্য সবাই নয়, আপনাদের মধ্যে খুবই কম, নগণ্য, হাতে গোনা দু'চারজন আছেন, যারা এমনটি করেন না, যারা সত্যিকার অর্থেই দেশকে ভালোবাসেন। দেশের জন্য কাজ করেন এবং সে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। ফলশ্রুতিতে তারা নিজেরা নিজেদেরকে আড়াল করে রাখেন, অনেকটা নিরবেই কাজ করে যান।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কখনও কখনও আপনি বা আপনারা আপনাদের নিজ নিজ স্বার্থের জন্য অথবা প্রভুদের ইশারায় দেশের স্বার্থ বিরোধী কাজ করে থাকেন, এ কথা কিন্তু এখন আর অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কারণ বাংলাদেশের সকল জনগণ ইতিমধ্যে তা জেনে গিয়েছে। বিশেষ করে ২৪ এর ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তা প্রমাণিত সত্য হয়ে সবার কাছে ধরা দিয়েছে।
আপনি একটা ভিন্ন দেশকে সুবিধা দিতে চাচ্ছেন, দালালি করছেন! কেন, আপনাকে কে বললো অন্য দেশের দালালি করতে, অন্য দেশ আপনাকে কি দিবে? নিজের দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আপনি যদি অন্য দেশকে কিছু দেন, তাহলে আপনার ঘরের লোকেরা কি বলবে বলুন তো। আপনি তো তখন মীরজাফর হিসেবে চিহ্নিত হবেন জাতির কাছে, তাই না? সেজন্যই তো সম্প্রতি দেশীয় মীরজাফরেরা, রাজনীতিবিদ ও তাদের দোসররা, পিয়ন থেকে আরম্ভ করে সর্বোচ্চ ব্যক্তি পর্যন্ত পালিয়ে গিয়েছেন পাশের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
রাস্তায় পোস্টটা দেখলাম, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ,,,,, এর অপসারণ চাই। তিনি বিগত সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে ছিলেন, অভিযোগকারীদের ভাষায় তার হাত খুনের রক্তে রঞ্জিত। তার তদারকি ও ব্যবস্থাপনায় তার অধঃস্থন পুলিশ বাহিনী গুলি করে প্রায় (দুই হাজার) ২০০০ মানুষকে খুন করেছে। ২৪ এর গণ-অভ্যূথানে পুলিশের দ্বারাই শহীদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
অপরদিকে কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে বলা হয় তারা ভারতের দালাল, কখনও কখনও পাকিস্তানের দালাল। আগে শুনতাম আমেরিকা, চীন রাশিয়ার দালাল। কেনোরে ভাই, অন্য দেশের দালাল হওয়ার কি দরকার, নিজের দেশকে ভালবেসে বাংলাদেশের দালাল হোন না কেনো?
আরও পড়ুন <<>> বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন কোনটি আগে?
আসলে মনে হয় কি তারা তাদের উচ্চাভিলাসী চাহিদা আর মানসিক বৈকল্যের জন্য নিজের অবস্থানে নিজেকে তারা সন্তুষ্ট রাখতে পারেন না। সে কারণেই আরও বেশি উপরে যাওয়ার, আরো বেশি সম্মান পাওয়ার জন্য, আরো ক্ষমতা, আরো বেশি টাকা উপার্জনের নেশায় ভিনদেশের দালালি করে থাকেন।
বাংলাদেশের যে কোন মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা যে সম্মান, ইজ্জত এবং বেতন পান, তা দিয়ে তাদের জীবন খুব সুন্দর ভাবে মান-সম্মানের সাথে কেটে যাওয়ার কথা। তারপরও তাদের চাহিদার শেষ নেই, অভাবের সীমা নেই। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ তাদের সন্তানদের বিদেশে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেন। নিজেরা স্বপদে বহাল থেকে হয় দেশীয় কোনো রাজনৈতিক দলের দালালি করে তাদের কৃপা ধন্য হয়ে জীবন অতিবাহিত করে থাকেন।
ওই যে প্রথম শুরু করেছিলাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব জনাব অমুক, তিনি স্বৈরাচারের দোসর, রাস্তায় রাস্তায় পোস্টারিং হয়েছে তার বিরুদ্ধে, তার ‘অপসারণ চাই’। এ কথার বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছে আজকের আলোচনা।
পরিশেষে বলা যায় যে, কোন ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি যদি নিজের দায়িত্ববোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সঠিক ও যথাযথভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে তো জনগণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে অপসারণ করার প্রস্তাব করতো না। তাই উদাত্ত আহ্বান আজ যারা বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বরত আছেন, তারা নিজেদের ক্ষমতার প্রয়োগ ও চর্চা বিবেকবান, দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মত অব্যাহত রাখবেন। ক্ষমতা নয় দায়িত্ব মনে করবেন। তবে তখন আমজনতা আপনার অপসারণ না চেয়ে বরং আপনাকে স্বপদে বহাল রাখার জন্যই আন্দোলন করবে।
লেখক:
এম এম এ শাহজাহান, প্রকৌশলী
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।