Advertisement

প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান


প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

চাঁদাবাজি বন্ধে রাষ্ট্র ও নাগরিকের করণীয় 

চাঁদাবাজি বন্ধে রাষ্ট্র ও নাগরিকের করণীয় 
ছবি: সবার দেশ

শুধুমাত্র কিছুসংখক চাঁদাবাজকে প্রতিহত করে চাঁদাবাজি বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন আপন-পর, প্রিয়-অপ্রিয়, নিজের বা পরের না দেখে কঠোর আইনের সঠিক প্রয়োগ।

দেশপ্রেমিক নাগরিক সর্বদা তার দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ পোষণ করেন এবং দেশের উন্নয়ন, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা কাজ করে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে এবং স্বাধীনতার চেতনা বিক্রি করে দেশ লুন্ঠন করলে সে লুণ্ঠনকারীদের পক্ষে কি আমরা থাকতে পারি? লুণ্ঠনকারী এবং তার দোসরদের ব্যতীত সবার একমাত্র উত্তর হবে 'না'।

দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড যখন যে-ই করুক না কেনো সে-ই হলো রাজাকার। আর পূর্বে যে যা কিছু করুক, বর্তমানে যদি দেশকে ভালোবাসে, দেশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখে এবং সামনের সময়ে এরকম কাজ অবিচল এবং নিরবধিভাবে করতে থাকে, তারাই সত্যিকারের দেশ প্রেমিক, তারাই খাঁটি বাংলাদেশি।

একজন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি কখনোই চাঁদাবাজ হতে পারে না এবং চাঁদাবাজি চলতে দিতে পারে না । বিগত স্বৈরাচারী সরকার নিজেরা যেভাবে চাঁদাবাজিকে প্রশ্রয় দিয়েছে এবং স্বদেশের সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচার করেছে, তারা আর যাই হোক নিশ্চয়ই দেশ প্রেমিক নয়।

২০২৪ এর জুলাই আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত হয়ে নিজেদের জীবন নিয়ে পলায়ন করেছে। বর্তমানে তারা দেশ-বিদেশে অন্তত অর্থনৈতিকভাবে সুখে দিনাতিপাত করছে।

কিন্তু বিগত স্বৈরাচারী সরকারের এহেন খারাপ কাজের রেপ্লিকা বর্তমানেও কোন কোন দলের কিছু কিছু নেতাকর্মীদেরকে মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছে।  কোন কোন চাঁদাবাজির শুধু হাত বদল হয়েছে, চাঁদাবাজি ঠিকই বহাল তবিয়তে বিদ্যমান আছে। 

আমরা কি একবারও চিন্তা করতে পারি না যে, প্রায় দু' হাজার মানুষ শহীদ, ৩৪ হাজার মানুষ আহত, অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব বরণের বিনিময়ে নতুন করে যে স্বাধীনতার স্বাদ আমরা পেয়েছি সে রাষ্ট্রে এখন এরকম কোন কাজ হতে দেয়া উচিত নয়! 

আরও পড়ুন>> নতুন ভাবে ভ্যাট বাড়ানোর ঘোষণা এবং জনতার ভাবনা

পাঠক, নিশ্চয়ই উত্তর দিবেন উচিত নয়। কিন্তু তারপরও তো এরকম কাজ হচ্ছে। কারা করছে, কেন করছে, এদেরকে প্রতিহত করার উপায় কি ? এদেরকে প্রতিহত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে আমি নিজে এরকম কাজে জড়িত হবো না এবং আমার পাশে যে করছে তাকেও করতে দিবো না । ব্যক্তিগতভাবে এরকম শপথ হওয়া দরকার আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের। অর্থাৎ প্রত্যেককেই নিজেকে সংস্কার করতে হবে। সবাই যদি নিজেদের সংস্কার করি, তবে দেশেরে সংস্কার অটোমেটিক হয়ে যাবে।

এমন কাজে সরকারকেও কঠিন ভূমিকা পালন করতে হবে। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দিয়ে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে, চাঁদাবাজদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ।
 
যে সমস্ত রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতাকর্মী কর্তৃক এরকম চাঁদাবাজি হচ্ছে, তাদেরকে শুধু মুখে বলেই নয় বরং দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কার্যত প্রমাণ রাখতে হবে যে তারা চাঁদাবাজি প্রশ্রয় দেন না। প্রয়োজনে আপামর জনসাধারণের শান্তির কথা চিন্তা করে ওই সমস্ত নেতা কর্মীদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। জনগণের সত্যিকারে স্বস্তির কথা আমলে নিয়ে জনতার কল্যাণের জন্যেই রাজনীতি করতে হবে। 
 
সরকারের সদিচ্ছা, আইনের কঠিন প্রয়োগ এবং রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সত্যিকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ব্যতীত চাঁদাবাজি কখনোই বন্ধ হবে না। কেননা, আমাদের দেশে চলমান বিগত দিনের রাজনীতি ছিলো টাকা ও ক্ষমতা অর্জনের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্র-ছাত্রীরা নেতা হতে চায় সেরকম চিন্তা করেই। বিগত বছরগুলোতে আমরা তাই দেখে আসছি। এরকম ছাত্র-ছাত্রীদের সাধারণ চিন্তাই হলো যে, আমি নেতা হতে পারলে আমার ক্ষমতা বাড়বে এবং ন্যায় অন্যায় যে কোনভাবেই হোক আমি টাকা পয়সা রোজগার করতে পারবো এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো। 

সমাজ বদলের হাতিয়ার হল দেশ প্রেমিক ও কল্যাণকামী ছাত্র জনতা। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান তা প্রমাণ করে দিয়েছে। তাই ছাত্র জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় ভালো কাজের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।  এলাকায় এলাকায় পাঠাগার তৈরি করে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদেরকে গঠন করতে হবে। 

ছাত্র-জনতার ইচ্ছা ছিল বলেই তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এবং ৩৬শে জুলাই মানে ৫ আগস্ট আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে । রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা যখন ঠিক এরকম চেতনা ধারণ করবে, তখন চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর সরকারে যারা থাকবে, দেশ চালাবে, তাদেরও কঠিন ভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। চাঁদাবাজিতে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের যে কেউ জড়িত থাকবে, তাদেরকেও প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তখনই আইনের শাসন কায়েম হবে এবং দেশ উন্নত থেকে উন্নততর হতে থাকবে।

ভালো এবং ন্যায্য কাজের মাধ্যমে জাতির কল্যাণ করে দেশকে উন্নত জাতিতে পরিণত করতে পারলে তখনই চাঁদাবাজি বন্ধ হবে।

লেখক: 
প্রকৌশলী এম এম এ শাহজাহান
মার্কেটিং অ্যাডভাইজার, ফাইন গ্রুপ।

সম্পর্কিত বিষয়: